Latest posts by মো. তায়্যেবুল ইসলাম শোভন (see all)
- ‘সে যুগে মায়েরা বড়’: সভ্যতায় নারী সদস্যদের অবদান - February 23, 2021
- ‘হায়রোগ্লিফের দেশে’ – গল্পের ছলে মিশরীয় সভ্যতার জানা অজানা রহস্যের সন্ধান - February 19, 2021
- ‘যদ্যপি আমার গুরু’: আহমদ ছফার গুরু বন্দনা - February 8, 2021
- বইয়ের নাম : সে যুগে মায়েরা বড়
- বইয়ের ভাষা : বাংলা
- লেখকের নাম : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
- মুদ্রিত মূল্য : ১০০৳
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৫৬ টি
- প্রথম সংস্করণ : ফেব্রুয়ারী, ২০০৯
- আইএসবিএন : ৯৮৪৭০০৯৩০০৩১৮
- প্রকাশক : নালন্দা
প্রেক্ষাপট
‘সে যুগে মায়েরা বড়’ বইয়ে লেখক রচনা করেছেন মানব সভ্যতায় নারীদের অবদান নিয়ে। মানুষ একসময় অর্ধ জানোয়ারের মতো বন-জঙ্গল এ ঘুরে ফিরে শিকার করতো। নারী পুরুষের মধ্যে তখন কোনো ভেদাভেদ ছিলো না। সবাই একই কাজ করতো। এভাবে চলতে চলতে মানুষ যখন বল্লম আবিষ্কার করলো তখন কাজের মধ্যে ভাগাভাগি হলো। নারী সদস্যদের যেহেতু শিশুদের লালনপালন করতে হয়, তাই তারা ঘর বা বস্তিতে থাকতো আর আশপাশ থেকে ফলমূল কুড়িয়ে আনতো। আর পুরুষেরা বনে জঙ্গলে ঘুরে ফিরে শিকার করতো। আর এভাবেই কাজের ভাগাভাগির মাধ্যমে মানব সভ্যতায় আসে কারা হবে দলের প্রধান? এই প্রথা! আর সভ্যতার শুরুতে নারী সদস্যরাই ছিলো দলের প্রধান। আর এই বইতে লেখক মানবসভ্যতার যে যুগে মায়েরা বা মেয়েরা বড় ছিলো তার ইতিহাস পর্যালোচনা করেছেন।

কে হবে দলের প্রধান
পুরুষ নাকি নারী; কে হবে দলের প্রধান? প্রাচীনকালে এই অবস্থাটা নির্ভর করতো, দলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যাদের উপর ছিলো। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো দলের সবার খাবারের ব্যবস্থা করা। কারণ খাবার নাহলে মানুষ তো বাঁচবেই না।কৃষির আবিস্কারক কারা
কৃষিকাজকে বলা হয় ‘সভ্যতার ধরিত্রী‘। যখনই মানুষ কৃষির আবিষ্কার করলো, তখন থেকেই মানব সভ্যতার বিকাশ উত্তরোত্তর হারে বাড়তে থাকে। কারণ যখন মানুষ শিকার করতো তখন তাদেরকে প্রায় প্রতিদিনই শিকারে যেতে হতো। ছিলো না বিশ্রামের কোনো অবকাশ। কারণ খাদ্যের যোগান ছিলো না। প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন জোগাড় করতে হতো। কিন্তু যখনই কৃষির আবিস্কার হলো তখন একটি নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বাকি সময় মানুষ অবকাশ পেতো আর এই অবকাশে মানুষ ভাবতো এবং নতুন নতুন আবিষ্কার করতো। এভাবেই এগিয়ে চলেছে মানবসভ্যতা। কৃষি, যার কারণে আদিম মানুষেরা বন্য জীবনের বদলে গড়ে তুলেছিল নগর, শহর ইত্যাদি, সেই কৃষিকাজের আবিষ্কার কিন্তু মেয়েদের হাতেই!

পশুপালনের আবিষ্কারক কারা
বল্লম আবিষ্কার হওয়ার পর আদিম মানুষের মধ্যে কাজের মাঝে ভাগাভাগি হয় আর এই ভাগাভাগিতে পুরুষের ভাগে পড়ে পশু শিকার করা। আর এই পশু শিকার থেকেই পশুপালনের আবিষ্কার।

কোনটা আগে, কৃষি নাকি পশুপালন?
কোনটা আগে আবিষ্কৃত হয়, কৃষি নাকি পশুপালন? এই প্রশ্নটি নিয়ে পন্ডিতদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন আগে কৃষি আবার কেউ কেউ বলেছেন আগে পশুপালন। তারা নিজেদের মতের পক্ষে যুক্তিও পেশ করেছে। আবার একদল পন্ডিতের ভাষায়, “মানব সভ্যতার বিকাশ সবজায়গায় একরকম হয়নি। কোনো জায়গায় আগে কৃষির আবিস্কার আবার কোনো জায়গায় পশুপালনের আবিষ্কার হয়েছে।” আর তাদের এই মতই বেশি প্রধান্য পেয়েছে।কৃষি যেভাবে নারী থেকে পুরুষের হাতে এলো
কৃষির আবিষ্কারক মেয়েরা এবং এর দায়িত্ব প্রথম অবস্থায় মেয়েদের হাতে থাকলেও তা একসময় চলে আসে পুরুষের হাতে। যবে থেকে মানুষ কৃষিকাজে জানোয়ারের ব্যবহার শুরু করেছে তখন থেকেই পুরুষের দায়িত্বে চলে এসেছে কৃষি। কারণ পশুপালন এবং তাদের পরিচালনা ছিলো পুরুষদের কাজ। আর এই পশু যখন কৃষিকাজে ব্যবহৃত হতে থাকে তখন থেকেই মেয়েদের থেকে ছেলেদের হাতে চলে আসে কৃষির দায়িত্ব। মেয়েরা পশু পরিচালনে পারদর্শী ছিলোনা ব’লে এমনি হয়েছে।শিল্পের আবিস্কার
বর্তমান মানবসভ্যতার কথা শিল্প ছাড়া কল্পনায় করা যায়না। কারণ বর্তমানে মানবসভ্যতার অন্যতম মূল ভিত্তি হচ্ছে শিল্প। আর এই সব শিল্পই প্রথম ছিলো ‘কুটির শিল্প’। আর কুটির শিল্পের জন্মও মেয়েদের হাতে। কারণ পুরুষেরা ছিলো বন-জঙ্গলে বা কৃষিকাজে সবসময় ব্যস্ত। আর নারী সদস্যরা ছিলো সবসময়ই ঘরে। সন্তান লালনপালন ছিলো তাদের মূল কাজ। আর এই কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা আরও নানান খুঁটিনাটি কাজ করতে থাকে। আর এভাবেই তারা ঘর, ঘট এবং কাপড় বুননের মতো শিল্পের জন্ম দেয়।

লেখক পরিচিতি
দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ভারতের একজন প্রখ্যাত মার্কসবাদী দার্শনিক ও লেখক। তিনি প্রাচীন ভারতের দর্শনের বস্তুবাদকে উদ্ঘাটন করেছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ হল লোকায়তের প্রাচীন দর্শনকে তিনি বিরুদ্ধপক্ষের বিকৃতি হতে রক্ষা করেন এবং তা সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের পদ্ধতি সম্পর্কেও গবেষণা করেছেন বিশেষ করে প্রাচীন চিকিৎসক চরক ও সুশ্রুত সম্পর্কে। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ১৯শে নভেম্বর ১৯১৮ সালে ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থক ছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে ১৯৩৯ সালে বি এ এবং ১৯৪২ সালে এম এ পাশ করেন। এরপর তিনি ভারতীয় দর্শন এবং রাজনীতি, মার্সকবাদ, সাম্যবাদী লেখা ও গবেষণার দিকে আগ্রহী হন।
