- সেরার সেরা দাবাড়ুগণ ৩: মিখাইল তাল, দ্য ম্যাজিশিয়ান ফ্রম রিগা, পর্ব ৩ - December 31, 2020
- সেরার সেরা দাবাড়ুগণ ২: মিখাইল তাল, দ্য ম্যাজিশিয়ান ফ্রম রিগা ২য় পর্ব - December 1, 2020
- সেরার সেরা দাবাড়ুগণ ১: মিখাইল তাল, দ্য ম্যাজিশিয়ান ১ম পর্ব - November 20, 2020
বর্তমানই হল একমাত্র সময় যার কোনো শেষ নেই।
– আরউইন শ্রোডিঙ্গার
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল আলোচিত সমালোচিত শাখা হল কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। এই কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশে যাদের অবদান অবিসংবাদিত তাদের মধ্যে অস্ট্রিয়ার পদার্থবিদ আরউইন শ্রোডিঙ্গার অবশ্যই জায়গা করে নেবেন। তাঁর অবদানের উপর ভর করে গোটা কোয়ান্টাম বলবিদ্যার একটি বিশাল অংশ দাঁড়িয়ে। এছাড়া তিনি পদার্থের ডুয়ালিটি বা দ্বৈত আচরণ সম্পর্কেও অবদান রেখেছেন। তাকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মানা হয়।
শ্রোডিঙ্গার নামটি শুনলেই আমাদের মাথায় আসে তাঁর বিড়ালের পরীক্ষণের ঘটনাটি। কিন্তু তিনি নোবেল পুরস্কার পান আসলে শ্রোডিঙ্গার সমীকরণের জন্য, তথা কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় বিশেষ অবদানের জন্য। ১৯৩৩ সালে আরেক প্রখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী পল ডিরাকের সাথে যৌথ ভাবে পদার্থবিদ্যা বিভাগে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
আজকে আমরা এই মহান বিজ্ঞানী সম্পর্কে জানব।
প্রাথমিক জীবন
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এক উদ্ভিদবিদ বাবার ঘরে একমাত্র সন্তান হিসেবে জন্ম নেন আরউইন শ্রোডিঙ্গার। দিনটি ছিল ১৮৮৭ সালের ১২ আগস্ট। শ্রোডিঙ্গারের বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ছোট্ট লিনোলিয়াম ফ্যাক্টরি ছিল, যেখানে তিনি তেল-কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তাঁর বাবা রুডলফ শ্রোডিঙ্গার ভিয়েনা টেকনিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখানকার রসায়নের অধ্যাপক অ্যালেক্সান্ডার বাওয়ার এর মেয়ের সাথে রুডলফের বিয়ে হয়। শ্রোডিঙ্গারের মা, জর্জিন বাওয়ার ছিলেন ইংরেজ-অস্ট্রিয়ান। অপরপক্ষে, তাঁর বাবা ছিলেন বাভারিয়ান বংশোদ্ভূত। বাভারিয়ান হল দক্ষিণ জার্মানি থেকে উদ্ভূত একটি জনগোষ্ঠী।
ছোটবেলা থেকেই দারুণ মেধাবী ছিলেন বাবা-মার একমাত্র সন্তান শ্রোডিঙ্গার। বাসায় ইংরেজি, জার্মান দুই ভাষাতেই বাবা-মার কথা বলার দরুন অনায়াসেই তিনি উভয় ভাষা শিখে ফেলেন। তাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয় নি। ১১ বছর বয়স পর্যন্ত তাকে ঘরে গৃহশিক্ষক রেখে পড়ানো হয়, এরপর শ্রোডিঙ্গারকে ভিয়েনা একাডেমিক জিমনেশিয়ামে পাঠান তাঁর বাবা-মা। সেখানে তিনি গণিত, পদার্থকে ভালবেসে ফেলেন এবং শুধু তাই নয়, ভাষা শেখার প্রতিও তাঁর প্রভূত আগ্রহ জন্মেছিল। এছাড়া তাঁর নিজের বিবরণ থেকে জানা যায়, জার্মান কবিদের প্রতি তাঁর ভালোলাগা ছিল, বিশেষ করে নাট্যকারদের প্রতি। তিনি শুধু মুখস্ত করার বিষয়গুলো তীব্র অপছন্দ করতেন।
শিক্ষাজীবন ও গবেষণা
শ্রোডিঙ্গার ১৯০৬ সালে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯০৬-১০ সালে সেখানে থাকাকালীন তিনি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী বোল্টজম্যানের উত্তরসূরি ফ্রিটজ হ্যাজেনঅলের সান্নিধ্যে আসেন। ঠিক এ সময়টাতেই শ্রোডিঙ্গার আইজেনভ্যালু সম্পর্কিত বিষয়ে সমস্যাবলী সমাধানে পাণ্ডিত্য লাভ করেন, যা তাঁর পরবর্তী জীবনের অভূতপূর্ব সাফল্যগুলো অর্জনে সহায়ক হয়েছিল।
১৯১০ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর তিনি সেখানেই পদার্থবিদ্যা বিভাগে সহকারী গবেষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে শ্রোডিঙ্গার অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় জোটের পক্ষে গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান রূপে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
যুদ্ধ পরবর্তী ক্যারিয়ার
বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ১৯২০ সালে শ্রোডিঙ্গার অ্যানেম্যারি বার্টেল নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন। সেবছরই তিনি স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাক্স উইনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু তিনি কোথাও থিতু হতে পারছিলেন না। কিছুকাল তিনি তৎকালীন জার্মানির ব্রেসলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন, যা আজকের দিনের মানচিত্র অনুযায়ী পোল্যান্ডের অন্তর্গত। সেখানেও তিনি স্থায়ী হলেন না। অবশেষে ১৯২১ সালে শ্রোডিঙ্গার জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন যেখানে তিনি ছয় বছর কর্মরত থাকেন। ছাত্রদের মাঝে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯২১ সালেই তিনি পদার্থের আণবিক গঠন বিষয়ে কাজ করা শুরু করেন এবং ১৯২৪ সালে গবেষণায় মন দেন কোয়ান্টাম পরিসংখ্যানে।
১৯২৬ সালে, তাঁর ৩৯ বছর বয়সে (যা কী না সাধারণত গবেষণাপত্র প্রকাশ করার পক্ষে যথেষ্টই বেশি) শ্রোডিঙ্গার নিজের শ্রেষ্ঠ অভিসন্দর্ভগুলো লিখতে থাকেন। একের পর এক প্রকাশিত তাঁর এই সৃষ্টিকর্ম গুলোই আধুনিক কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ভিত্তি রচিত করে। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে তাঁর অবদান আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। শ্রোডিঙ্গার কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে গবেষণা করেন এবং এতে আংশিক অন্তরজের ব্যবহার করেন। তিনি ডি ব্রগলির দ্বৈত প্রকৃতির তত্ত্বকে সমর্থন করেন, যা বলে কোনো বস্তুর মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে তরঙ্গের মত বৈশিষ্ট্য আবির্ভূত হয়। তিনি তরঙ্গ সমীকরণের দ্বারা একটি বিশেষ তত্ত্ব প্রদান করেন, যার ফলে আজকের দিনে সমীকরণটির নামকরণ তাঁর নামেই হয়েছে। শ্রোডিঙ্গার সমীকরণ বলে এক নামে যেটিকে চেনে সবাই।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ত্রাতা
নিউটনীয় বলবিদ্যার সাথে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মূল পার্থক্যের জায়গা হল নিশ্চয়তায়। গত শতাব্দীর বিশের দশকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার যাত্রা শুরু। নিউটনীয় বলবিদ্যায় যেরকম বাস্তব জগতের সব পরীক্ষণ সংঘটিত হয়, তার ফলাফল মোটামুটি সব সুনিশ্চিত। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যা আদতে অতটা সহজ জিনিস নয়, এখানে পরীক্ষণের বস্তু যেমন আণুবীক্ষণিক, তেমনই ফলাফল অনিশ্চিত। এই বিষয়টি প্রথম বিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ তাঁর বিখ্যাত অনিশ্চয়তা নীতিতে প্রস্তাব করেন। এই নীতি অনুসারে, কোনো বস্তুর ভরবেগ এবং অবস্থান একইসাথে নির্ভূল করে বের করা সম্ভব না। যদি ভরবেগ এর মান সুনির্দিষ্ট করে বের করা যায়, তখন আর তার অবস্থান সুনির্দিষ্ট হবে না। আবার যদি অবস্থান নির্ভূলভাবে বের করতে যাই, তবে ভরবেগের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হবে।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যার এই দৃষ্টিভঙ্গি এতটাই অস্পষ্ট আর ধোঁয়াশাপূর্ণ ছিল যে, শ্রোডিঙ্গার তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় এর পেছনে ব্যয় করেন। তিনি যৌক্তিকভাবে এবং দর্শনগত দিক থেকে একে বোধগম্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রোডিঙ্গার ১৯৩৫ সালে তাঁর সবথেকে বিখ্যাত চিন্তন পরীক্ষণটি (জার্মান ভাষায় যাকে বলে গেডাঙ্কেন এক্সপেরিমেন্ট) করে সবার সামনে উপস্থাপন করেন। এটি বহুল ভাবে শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল পরীক্ষণ নামে পরিচিত। এরপর তিনি শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ আবিষ্কার করে দেখান যে, হাইড্রোজেনের শক্তির পরিমাপ এই সমীকরণ থেকেও করা সম্ভব। এই সমীকরণ দ্বারা মূলত, গাণিতিকভাবে তরঙ্গের ফাংশনকে বোঝানো যায়।
শ্রোডিঙ্গার এবং তাঁর বিড়াল
শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল পরীক্ষণের সবচেয়ে মজার ব্যাপার, যা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যাবেন তা হল, বিজ্ঞানী শ্রোডিঙ্গারের এই পরীক্ষাটি পরীক্ষাগারে আদতে কখনও করেনই নি। তিনি শুধু চিন্তা করে বের করেছিলেন। পরীক্ষণটি এমনঃ একটি বিড়ালকে যদি এমন কোনো বাক্সে রাখা হয় যেখানে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য (যেমন, গান পাউডার) রাখা আছে। একটি নির্দিষ্ট সময় (ধরি, এক ঘণ্টা) পর তা বিস্ফোরিত হতে পারে, আবার নাও পারে। এই সম্ভাবনা সমান সমান, অর্থাৎ পঞ্চাশ শতাংশ করে। তবে বিস্ফোরন ঘটলে বিড়ালটি অবশ্যই মারা যাবে।
এখন ঐ নির্দিষ্ট সময় পর তথা এক ঘণ্টা পর বাক্সের মুখ খুললে আমরা কী দেখবো? বিড়ালটি কি জীবিত না মৃত? (বি. দ্র. আইনস্টাইন গান পাউডার বলেছিলেন, কিন্তু শ্রোডিঙ্গার বিষাক্ত গ্যাস হিসেবে বর্ণনা করেন)। গান পাউডার বা বিষাক্ত গ্যাস যাই হোক, সেই সময় পর বিড়ালটির ভাগ্যে কী ঘটবে? আমাদের সাধারণ বোধ-বুদ্ধিতে আমরা যেমন বুঝি, সেই হিসেবে হয় বিড়ালটি জীবিত থাকবে নয়তো মৃত; কিন্তু দুইটি একসাথে নয়। কিন্তু শ্রোডিঙ্গার কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আলোকে দেখান যে, বাক্সটি খোলার ঠিক পূর্ব-মুহূর্তে বিড়ালটির অর্ধেক অংশ জীবিত, অর্ধেক মৃত যুগপৎভাবে।
বিড়ালের এই অবস্থাকে বলা হয় সুপারপজিশনাল স্টেট। এটি নিশ্চিত হওয়া যায় দ্বি-চিড় পরীক্ষার মাধ্যমে। এর আবিষ্কারক টমাস ইয়াং এর সম্মানে একে টমাস ইয়াং-এর দ্বি-চিড় পরীক্ষাও বলা হয়। শুধু বাক্সটি খুললেই আমরা নিশ্চিত, নচেৎ নয়। এর আগ পর্যন্ত উভয়টিই সম্ভব। এই বিষয়টি কিন্তু একটু বিদঘুঁটে। তবুও এটি খুব দরকারি, কারণ কোয়ান্টাম বলবিদ্যা অনুযায়ী কোনো বস্তু যদি একসাথে দুইটি অবস্থায় থাকতে না পারত, তাহলে আপনার হাতের এই মোবাইল বা সামনের ল্যাপটপ, কম্পিউটার কোনোটাই কাজ করত না।
বিড়াল পরীক্ষণের এই বিদঘুঁটে রূপ শ্রোডিঙ্গারকে এতটাই উদভ্রান্ত করে তোলে যে, তিনি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ছেড়ে দিয়ে জীববিদ্যায় মন দেন। ১৯৪৪ সালে তাঁর What Is Life? বই বের হয়। এর ক’বছর পর ওয়াটসন এবং ক্রিক ডিএনএর মডেল আবিষ্কার করেন, তারা স্বীকার করেন শ্রোডিঙ্গারের বইটি পড়ে তারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ
গত শতকের বিশের দশক থেকে শুরু করে গুটিকতক বিজ্ঞানীর হাত ধরে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে বিকশিত হতে থাকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। বিষয়টির শুরু হয় আলোর ধর্ম নিয়ে ঘাঁটতে গিয়ে। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ ভেবে আসছে আলো কী? আলো কিসের মত আচরণ করে? ঊনবিংশ শতকে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষণের মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে আসেন যে, আলো একটি তরঙ্গ, বা অন্তত তরঙ্গের মত আচরণ করে। আবার কিছু পরীক্ষা তাদের এটাও ভাবতে বাধ্য করে যে, আলো একটি পার্টিকেল বা বস্তুর মত আচরণ করে। এর সূত্র ধরেই আবির্ভূত ঘটে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যার একদম নতুন ধারণা নিয়ে আসেন ম্যাক্স প্লাঙ্ক। তিনি দেখান শক্তি অতি ক্ষুদ্র একটি পরিমাণের থেকে আর ক্ষুদ্র হতে পারে না। তিনি তাঁর যুগান্তকারী তত্ত্ব দিয়ে দেখান আলো আসলে নিরবিচ্ছিন্ন নয়, আলো একটি একক আকারে নির্গত হয়; যার নাম তিনি দেন কোয়ান্টাম। আর এই কোয়ান্টামের গতি-প্রকৃতি আলোচিত হয় যে শাখায়, তাকেই কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলে। আলবার্ট আইনস্টাইন আবার তাঁর এই তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া (ফটো-ইলেকট্রিক ইফেক্ট) ব্যাখ্যা করে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর মতে আলো প্যাকেট আকারে নির্গত হয়, যা বস্তুর মত ধর্ম দেখায়।
পরবর্তীতে ডি ব্রগলি তাঁর তরঙ্গ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হলে পদার্থবিজ্ঞান জগতে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তিনি দেখান, আলো দুইটি রূপেই আচরণ করতে পারে। শুধু আলো কেন, সব পদার্থই তরঙ্গ এবং বস্তু দুই রূপেই আচরণ করতে পারে। এব্যাপারে ব্রগলি তাঁর সমীকরণও দেন। এরপর অনিশ্চয়তা নীতি নিয়ে আসেন ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ। সবশেষে শ্রোডিঙ্গার ১৯২৬ সালে কোয়ান্টাম তরঙ্গ বলবিদ্যার কাজ করেন। সেখানে তিনি তাঁর সমীকরণ প্রদান করেন, যা দেখতে নিম্নের চিত্রের অনুরূপঃ
সমীকরণটি আজকে শ্রোডিঙ্গার জুটির স্মৃতিস্তম্ভে শোভা পাচ্ছেঃ
শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ দ্বারা পদার্থের তরঙ্গ ফাংশনের গাণিতিক বিবরণ বা চিত্ররূপ দেয়া সম্ভব হয়েছে। আর সাথে এটাও দেখানো সম্ভব হয়েছে যে, এই ফাংশন দ্বারা আসলে বুঝায়টা কী! এখানে মূলত, আংশিক অন্তরীকরণ ব্যবহৃত হয়েছে। শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ তর্কসাপেক্ষে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ পুরো কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যেই! এর মূল কৃতিত্ব হল, তরঙ্গের আকৃতিকে ফাংশন আকারে প্রকাশ। আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার তিনি আবিষ্কার করেন, তা হল আধান ঘনত্ব (চার্জ ডেনসিটি) এর থেকে জানা যায়। এই সমীকরণকে পুরো কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।
অর্জন এবং শেষজীবন
১৯২৭ সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। সেখানে তিনি আলবার্ট আইনস্টাইনের সাথে একটি বিশেষায়িত বিভাগে কাজ করেন। জার্মানিতে ইহুদি নিধন শুরু হওয়ায় ছয় বছর সেখানে থাকার পর চলে আসেন তিনি। অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি হয়ে শেষমেশ আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে থিতু হন তিনি। সেখানে ১৫ বছর তিনি পদার্থবিজ্ঞান, দর্শন এবং বিজ্ঞানের ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করেন।
১৯৩৩ সালে পল ডিরাকের সাথে যৌথ ভাবে নোবেল পুরস্কার পান শ্রোডিঙ্গার। শ্রোডিঙ্গার সমীকরণের জন্য এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় প্রভূত অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এটি দেয়া হয়। এছাড়া ১৯৩৭ সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক পদক পান তিনি। এই মহান বিজ্ঞানী ১৯৬১ সালের ৪ঠা জানুয়ারি, ৭৩ বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে নিজ শহর ভিয়েনায় মৃত্যুবরণ করেন। অধ্যাপক ওয়াল্টার যে মুর তাঁর জীবনী লিখেছেন Schrödinger: Life and Thought বইয়ে। সেই বই থেকে একটি উক্তি দিয়ে নিবন্ধ শেষ করছিঃ
মানব বিকাশের পর্যায়গুলো তাড়িত হয় অধিকার, জ্ঞান, দক্ষতা এবং টিকে থাকার চেষ্টার দ্বারা।
– আরউইন শ্রোডিঙ্গার
ফিচার ছবিসূত্রঃ Wikimedia Commons
তথ্যসুত্রঃ
- Encyclopedia Britannica
- The Nobel Prize
- Nature
- Biography
- Famous Scientists
- Math History St. Andrews
- CrashCourse
- Khan Academy
- Ted-Ed
- Professor Dave Explains
- Veritasium
- University of Zurich
সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহ: