- প্রিন্স ফিলিপ এর মৃত্যু এবং একটি রাজকীয় অধ্যায়ের সমাপ্তি (দ্বিতীয় পর্ব) - April 13, 2021
- প্রিন্স ফিলিপ এর মৃত্যু এবং একটি রাজকীয় অধ্যায়ের সমাপ্তি (প্রথম পর্ব) - April 11, 2021
- যে উপায়ে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরা লাভবান হয় (শেষ পর্ব) - April 9, 2021
আলোচ্য ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে ফাস্টফুড শিল্পের শুরুর দিকের কথা উঠে এসেছে। পাশাপাশি ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রি ঠিক কতটা বড় বা প্রতি বছরে ঠিক কত পরিমাণ রাজস্ব আসে এই খাত থেকে সেই বিষয়েও বক্তব্য উঠে এসেছে। চলমান পর্বে ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে সারা বিশ্বে প্রসার লাভ করলো সেই বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফাস্টফুড স্টোরগুলোর অভাবনীয় সূচনা
ম্যাকডোনাল্ডের ব্যাপক প্রসার ফাস্টফুডের এক জোয়ার সূচনা করে। স্থানীয় পর্যায়ে বহু স্টোর যাত্রা শুরু করে, যাদের অনেকেই আজ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিখ্যাত ফাস্টফুড চেইন হিসেবে পরিচিত।
১৯৪৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যেই যাত্রা শুরু করে ‘ইন এন আউট’ বার্গার স্টোর। লস এঞ্জেলসের দুই ভাই এস্থার স্নাইডার এবং হ্যারি স্নাইডার মাত্র ১০ বর্গফুট জায়গায় তাদের স্টোর প্রতিষ্ঠা করেন।


১৯৫২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের সল্ট লেক সিটিতে কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্স গড়ে তুলেন ক্যান্টাকি ফ্রাইড চিকেন যা সংক্ষেপে কেএফসি নামে সারা বিশ্বে খ্যাত।


অন্যদিকে ১৯৫৪ সালে ডেভিড এডগার্টন এবং জেমস ম্যাকলামর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামি শহরে বার্গার কিং এর প্রথম স্টোর স্থাপন করেন।


বার্গার কিং এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে, মাত্র ৩ বছর পরেই, ১৯৫৭ সালে তারা তাদের ট্রেডমার্ক বার্গার ‘হপার’ বাজারে নিয়ে আসে।


আজ, ২০২১ সাল, প্রায় ৬৫ বছর পরেও হপার বার্গারের জনপ্রিয়তা অটুট আছে।
পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস অঙ্গরাজ্যের উইচিটা শহরের দুই ভাই ড্যান কার্নে এবং ফ্র্যাংক কার্নে তাদের মায়ের কাছ থেকে ৬০০ ডলার ধার করে পিজ্জা হাট গড়ে তুলেন।
১৯৪০ থেকে ১৯৫৮, মাত্র ১৮ বছরের ব্যবধানে এতগুলো ফাস্টফুড চেইন স্টোরের আবির্ভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ফাস্টফুড স্টোর কেন্দ্রিক অনেক শিল্পেরও বিকাশ ঘটতে শুরু করে।
আজ, ২০২১ সাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফাস্টফুড যেন দৈনন্দিন জীবনেরই অংশ হয়ে আছে। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক ফাস্টফুড স্টোর আছে।
আরো পড়ুন: গ্রিন টি: বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর পানীয়
ফ্র্যাঞ্চাইজি বিক্রয়
ফ্র্যাঞ্চাইজি হলো কোনো নামীদামী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া।
উদাহরণস্বরূপ কোকা-কোলা বাংলাদেশের উদাহরণ দেওয়া যায়। এটা কখনোই সম্ভব না যে, কোকা-কোলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করে সেখান থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করবে। পরিবহন খরচের কারণে তখণ পণ্যের মূল্য অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে যাবে।
আমরা যদি একটু মনোযোগ দিয়ে বাংলাদেশের কোকা-কোলার মোড়কের দিকে তাকাই; তবে দেখতে পাই যে, এর প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান হলো প্রাণ ডেইরি লিমিটেড।
কিন্তু প্রাণ ডেইরি লিমিটেড মূল প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রয় করেছে বিধায় এটি কোকা-কোলা নামেই পানীয় বিক্রি করছে। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ উৎপাদন করছে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড কিন্তু কোকা-কোলার ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে পানীয়টি কোকা-কোলা নামে বিক্রি হচ্ছে।
১৯৬০ এর দশক থেকে ফাস্টফুড স্টোরগুলো ঠিক এই পদ্ধতির অবলম্বন শুরু করে।
নিজেদের মূল রেসিপি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে মাসিক মুনাফার একটি নির্দিষ্ট অংশের বিনিময়ে ফাস্টফুড স্টোরগুলো নিজেদের নাম ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
ফলে একই সাথে দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। প্রথমত হলো চেইন স্টোর, যা মূল স্টোরের সরাসরি মালিকানাধীন। অন্যদিকে আছে ফ্র্যাঞ্চাইজি, যে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন এবং ফাস্টফুড জগতে নতুন দিগন্ত
১৯৪০ এর দশকে মাইক্রোওয়েভ ওভেন আবিষ্কৃত হয়। এই ওভেন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। মাত্র ১৫ সেকেন্ডে আপনি আপনার সকাল বা বিকালের নাস্তা গরম করে নিতে পারবেন। অথবা মাত্র এক থেকে দেড় মিনিটে গরম করে নিতে পারবেন আপনার দুপুরের খাবার।


ফলে আগে থেকে রান্না করে রাখলে খাবার নষ্ট হয়ে যাবে, এই চিন্তাও দূরীভূত হয়। কারণ আগে থেকে উপাদানগুলো তৈরি করে Pre-cook করে রাখলে ভোক্তার সামনে খুব দ্রুতই উপস্থাপন করা যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফাস্টফুড সংস্কৃতি রপ্তানি’
বিশ্ব পরাশক্তিদের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব কারোরই অচেনা নয়। আজকের দিনে কোনো সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আর ভূমির দখল চায় না।
বরং চায় ঐ ভূমির অধিবাসীদের ব্যবহার করে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের একটি বাজার তৈরি করতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ব্যতিক্রম নয়।
আমেরিকা ছেড়ে এই সকল ফাস্টফুড উদ্যোক্তা তখন মনোযোগ দিলেন বাইরের দুনিয়ায়। প্রথম ধাপে অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোই ছিল তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
তবে ৯০ এর দশকের শুরু থেকে সারা পৃথিবীতেই এই সকল মার্কিন ফাস্টফুড স্টোরের আউটলেট ছড়িয়ে পরে।
মূল বাণিজ্যিক কৌশল
তবে যে বিষয়টি ফাস্টফুড স্টোরগুলোর সার্বজনীন জনপ্রিয়তার মূল কারণ; তা হলো, দেশ বা সংস্কৃতি ভেদে প্রচলিত এবং জনপ্রিয় খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কাজ করা।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ম্যাকডোনাল্ড তাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিচালিত আউটলেট বা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতে ‘হালাল’ সার্টিফাইড খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রি করে।


একইভাবে, ইহুদি ধর্মের অনুসৃত ‘কোশের’ নামক খাদ্যাভ্যাসের জন্য ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে ম্যাকডোনাল্ড কোশের সার্টিফাইড খাদ্যদ্রব্য এবং পানীয় বিক্রি করে।


দ্বীপরাষ্ট্র জাপানে ফাস্টফুড স্টোরগুলো তাদের কৌশলে পরিবর্তন এনে মাংসের পরিবর্তে তারা টুনা মাছ ব্যবহার করতে শুরু করে।
ভারতে নিরামিষাশী ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করতে স্টোরগুলো নিরামিষ বার্গার, পিজা বা ভেজিটেবল রোল বিক্রি করে থাকে।


পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাসের কথা চিন্তা করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েই ফাস্টফুড স্টোরগুলো আজ সারা পৃথিবীতে তাদের রাজত্বের জানান দিচ্ছে।
তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন