- প্রিন্স ফিলিপ এর মৃত্যু এবং একটি রাজকীয় অধ্যায়ের সমাপ্তি (দ্বিতীয় পর্ব) - April 13, 2021
- প্রিন্স ফিলিপ এর মৃত্যু এবং একটি রাজকীয় অধ্যায়ের সমাপ্তি (প্রথম পর্ব) - April 11, 2021
- যে উপায়ে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরা লাভবান হয় (শেষ পর্ব) - April 9, 2021
আলোচ্য ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রির শুরুর দিকের কথা উঠে এসেছে। কীভাবে ফাস্টফুড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপন করলো, তাই ছিল প্রথম পর্বের উপজীব্য।
আর কীভাবে ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রি সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লো, সেই আলোচনা রয়েছে দ্বিতীয় পর্বে।
তৃতীয় পর্বে গত শতাব্দীর শেষের দশকে ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নে নিজের ঝাণ্ডা উড়ালো এবং কীভাবে নিজেদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিলো, সেই আলোচনার সাথে সাথে ফাস্টফুড এবং পৃথিবীব্যাপী ক্রমবর্ধমান স্থূলতার সম্পর্কও আলোচিত হয়েছে।
চলমান পর্ব তথা শেষ পর্বে পরিবেশ দূষণের সাথে ফাস্টফুড শিল্পের সম্পর্ক এবং কীভাবে সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ফাস্টফুড শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত ফুটে উঠেছে।
কর্তৃপক্ষের বিধিনিষেধ
স্থূলতা কেবল একটি সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; ধীরে ধীরে জাতীয়তার সীমানা পেরিয়ে এটি হয়ে উঠেছে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই, সরকারও বাধ্য হয়েছে এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ‘দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ) কাজ করে সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য নানা রকম খাদ্যদ্রব্য, কসমেটিক্স, ঔষধ বা পানীয় কোনোভাবে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে কী না, তা নিয়ে।
সংস্থাটি ২০১৮ সালে একটি আইন প্রবর্তন করে। এই আইনের আওতায় সকল ফাস্টফুড স্টোর তাদের মেন্যু কার্ডে তাদের পরিবেশিত খাদ্যের ক্যালরি মান প্রকাশে বাধ্য থাকবে।
প্রথমে ভাবা হয়েছিল, অধিকাংশ মানুষ হয়তোবা এতে করে হয়তো নতুন করে সচেতন হবে। যদিও সরকারের সেই আশা পূরণ হয়নি। তবে ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রির মনোপলি বন্ধে সরকারের এরূপ পদক্ষেপ সকলের মনে আশা জাগিয়েছে।
পরিবেশ দূষণ এবং ফাস্টফুড শিল্প
গত শতাব্দীর শেষের দিকে প্রথম মানুষের মাথায় পরিবেশ দূষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কথা আসে। পৃথিবীর দুই মেরুতে ক্রমহ্রাসমান বরফের পরিমাণ এবং ক্ষয়িষ্ণু বনাঞ্চল মানুষকে বরাবরই উদ্বিগ্ন করেছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল কারণ বলা যায় গ্রিনহাউজ প্রভাবকে। গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলোর তাপধারণ ক্ষমতা বেশি। ফলে সূর্য থেকে আগত তাপকে তারা ধরে রাখে। ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং তা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। বিভিন্ন গ্রিনহাউজ গ্যাসের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেনের পরিমাণই সবথেকে বেশি।
১৯৯৭ সালে জাপানের কিয়োটো শহরে কিয়োটো প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো তাদের নিজ দেশে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, গরু, মুরগি এবং অন্যান্য মাংসজাত দ্রব্যই মিথেনের মূল উৎপাদক। এবং আরো অবিশ্বাস্য এটা যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীতে গরুর মাংসের সবচেয়ে বড় উৎপাদক।
দ্বিতীয় স্থানে আছে ব্রাজিল এবং তৃতীয় স্থানে আছে ভারত। সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এই গরুর মাংসের সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় ফাস্টফুড শিল্পে।


এ তো গেলো কেবল গরুর মাংসের কথা। মুরগি এবং ছাগলের মাংসের কথা বিবেচনায় আনলে এই পরিমাণ আরো বাড়তে থাকবে। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে পরিবেশে মিথেনের মাত্রা।
তাই সরকারের পক্ষ থেকে ফাস্টফুড স্টোরগুলোর প্রতি চাপ আসছিল যাতে তারা পরিবেশের কথা মাথায় রেখে নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বর্জ্য দূষণ এবং ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রি
খাবার প্রস্তুতির পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার কাজে প্রচুর বর্জ্যের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া মানুষের হাতে পৌঁছানোর সময়ও প্রচুর পরিমাণে বর্জ্যের সৃষ্টি হয়।
এসকল আবর্জনা নদী থেকে সবশেষে গিয়ে পড়ছে সমুদ্রতে। সমুদ্রের বিশাল জীববৈচিত্র্য এর ফলে ঝুঁকির মুখে পড়ছে। আর এই বিষয়টি নিয়েই বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদীরা নতুন চিন্তায় পড়লেন। কারণ, হঠাৎ করেই তো আর বর্জ্যের পরিমাণ শুন্যতে নামিয়ে আনা যায় না।
তখন থেকেই পুনরায় ব্যবহার উপযোগী কাঁচামাল ব্যবহারের ব্যাপারে প্রচারণা শুরু হয়। প্লাস্টিক থেকে যতদূর সম্ভব সরে এসে প্রাকৃতিক এবং দ্রুত বিয়োজনে সক্ষম এরূপ উপাদান ব্যবহারের প্রচলন হয়। আর যেক্ষেত্রে একদমই প্লাস্টিককে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে যাতে সর্বোচ্চ পরিমাণে রিসাইকেল করা সম্ভব হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়।
একবিংশ শতাব্দীর শিশুদের উপরে প্রভাব
একবিংশ শতাব্দীর শিশুরা খুব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ফাস্টফুডের ভোক্তা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী, গড়ে প্রায় ৯৬ শতাংশ আমেরিকান শিশু ম্যাকডোনাল্ডের জনপ্রিয় ক্লাউন রোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ডকে চিনে। শিশুদের মাঝে কল্পিত চরিত্র হিসেবে কেবলমাত্র সান্তা ক্লজই এর অপেক্ষা জনপ্রিয়।
শেষ কথা
কী মনে হচ্ছে, ফাস্টফুড শিল্পের অবস্থা পড়তির দিকে?
না, কখনোই না।
বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশ; সব ধরনের দেশেরই তরুণ বয়সী জনগণের একটি বড় অংশ খণ্ডকালীন চাকরি হিসেবে এই ফাস্টফুড স্টোরগুলোর সাথে যুক্ত। আগামী ২০৩০ সালের দিকে ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রির বাজার ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করবে।
বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনের একটি বড় অংশের সাথে যুক্ত আছে ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রি। আর ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং চেইন স্টোরগুলো যেহেতু স্থানীয়ভাবে পরিচালিত হয়, তাই এসকল ফাস্টফুড স্টোরগুলো স্থানীয় পর্যায়ে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারছে।
তবে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রিকে প্রায় পৌনে এক শতাব্দী জুড়ে, তা হলো পরিস্থিতির প্রয়োজনে দ্রুত নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মানুষের প্রয়োজনেই ফাস্টফুডের উদ্ভব, আজ আর সেখান থেকেই এটি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রতিটি পরিস্থিতিতে তারা ভোক্তার চাহিদাকে সবার প্রথমে জায়গা দিয়েছে, দেশ, জাতি বা সামাজিক অবস্থান ভেদে নিজেকে অভিযোজন করেছে, এভাবেই আজ ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রি নিজেকে এমন এক চূড়ায় পৌঁছে গেছে, যেখান থেকে কেবল সামনেই এগিয়ে যাওয়া যায়।
ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।