- মুখোমুখি বাপু ও বঙ্গবন্ধু: সমাপ্ত বনাম অসমাপ্ত অধ্যায় - January 20, 2021
- ক্ষুদিরাম বসু: ছোট্ট অথচ বিদ্রোহী এক জীবন - December 3, 2020
- দি হিউম্যানি কর্পোরিস ফেব্রিকা: আধুনিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা যে বইয়ের কাছে ঋণী - November 18, 2020
১৮১৬ সাল। তখনকার দিনে স্টেথোস্কোপ আবিষ্কৃত হয়নি। ডাক্তাররা হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনে রোগীর রোগ সম্পর্কে ধারণা লাভের চেষ্টা করতেন। হৃদপিণ্ডের ওঠানামা ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রায়ই তাদের রোগীর বুকের সাথে কান লাগাতে হতো। ইউরােপের নামকরা ন্যাকার হাসপাতালের মধ্যবয়স্ক তরুণ ডাক্তার থিওফিল লেনেকও একই পদ্ধতি রোগ নির্ণয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন।
একদিন হঠাৎ তার হাসপাতালে হৃদরোগের সব লক্ষণ নিয়ে একজন সুন্দরী তরুণীর আগমন ঘটল। প্রথমে লেনেক ভেবেছিলেন হবে হয়তো কিছু একটা রোগের রোগিনী। নার্স যখন তাকে অবগত করলো যে রোগিণীর হৃদরোগের সব লক্ষণই স্পষ্ট, তাকে এক্ষুনি পরীক্ষা করা উচিত। লেনেক কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন।
বুঝতেই পারছেন পরিস্থিতি! তার উপর এখন তাকে তরুণীর বুকের মধ্যে কান লাগিয়ে নিশ্চিত হতে হবে তার আসলেই হৃদরোগ হয়েছে কি না! নিশ্চয়ই মনের ক্যানভাসে এঁকে ফেলছেন বাংলা কিংবা হিন্দি সিনেমার রোমান্টিক কোন একটা দৃশ্য! তাহলে দেরী কেন? চলুন সেই ছবিতে এখন রং-তুলি দিয়ে সুন্দর করে এঁকে দেখি ছবি আসলে কোন দিকে যায়!


স্টেথোস্কোপ আবিষ্কারের সূত্রপাত
লেনেকের জন্য এটি মজার একটা বিপদ হয়ে দাঁড়ালো। এমনিতেই মেয়েদের বিশেষ করে যুবতীদের তিনি দারুণ ভয় করতেন! আর এখন এই বিপুলা তরুণীর বুকে কান লাগিয়ে হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি শােনা! এর আগে নিজেরই বুকের ঢিপ ঢিপ শুরু হয়ে গেল তাঁর। কিন্তু হৃদরােগের রােগী। তাকে তাে যেমন করেই হােক পরীক্ষা করতেই হবে। তাহলে উপায়?
হাসপাতালে বিকল্প কোনো ডাক্তারও সেদিন ছিল না যে তার কাছে ট্রান্সফার করবেন। তিনি এক মুহূর্তের জন্য মহা ভাবনায় পড়ে গেলেন। বাইরে থেকে আসার নাম করে ভাবতে ভাবতে কখন যে তিনি রােগী-পরীক্ষার ঘর পেরিয়ে কাছের একটি পার্কে ঢুকে পড়েছেন টেরই পাননি ।
তখন সবেমাত্র স্কুল ছুটি হয়েছে। পার্কের ঘাস-ছাওয়া মাঠে অগণিত ছােট ছােট ছেলেমেয়ে ছুটোছুটি হুড়ােহুড়ি করছে। হঠাৎ পার্কের এক কোণে খেলায় ব্যস্ত থাকা চারজন ছেলে-মেয়ের দিকে চোখ পড়ল। একটি ছেলে একটা কাঠের গায়ে একদিকে একটি লােহার পিন দিয়ে খুব জোরে জোরে আঁচড় কাটছে আর অন্যদিকে বাকিরা কান ঠেকিয়ে শুনছে। হঠাৎ ওরা চেঁচিয়ে উঠল—
কি মজা! আঁচড়ের শব্দটা কী পরিষ্কার আর জোরে শােনা যাচ্ছে!
আনন্দে ওরা লাফিয়ে উঠল।
যে ছেলেটি এতক্ষণ আঁচড় কাটছিল, সে তার সাথীদের একজনকে লক্ষ্য করে বলল,
তুমি এবার এদিকে এস। আমার শুনতে হবে না বুঝি?
স্টেথোস্কোপ বানানোর পরিকল্পনা
লেনেক এতক্ষণ আড়াল থেকে ছেলেদের কাণ্ড-কারখানা দেখছিলেন, তার মনে পড়ে গেল, বিজ্ঞানের এক মৌলিক তত্ত্ব-
শব্দ যখন কোনাে নিরেট জিনিসের মধ্য দিয়ে যায় , তখন এটা বহুগুণে বেড়ে যায়।
তার মাথায় তখন অন্য চিন্তা। ভাবছেন,
ছিঃ! আমি কী বােকা! এই সােজা কথাটা আমার মাথায় এতদিন কেন আসছিল না। শব্দ যখন কোন নিরেট জিনিসের মধ্যে দিয়ে যায় তখন তা বহুগুণে বেড়ে যায় ; এ ছাড়া যদি শব্দকে একটি ফাপা চোঙার মধ্যে আবদ্ধ করে প্রবাহিত করা যায়…..
মনে মনে একটি মজার মতলব আঁটলেন তিনি হাসপাতালে এসে নার্সকে ডেকে বললেন-
– আমার জন্য কিছু কাগজ নিয়ে এসো।
– কাগজ? (অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে)
– হ্যাঁ, নিয়ে এসাে জলদি।


তারপর এক গাদা কাগজ গুটিয়ে তিনি একটি ফাঁপা চোঙার মতাে বানালেন। সেই কাগজের চোঙা হাতে করে রােগীর ঘরে উপস্থিত হলেন। সবাই ভাবল, এ আবার কি অদদ্ভুত কাণ্ড! কিন্তু ডাক্তারের অন্য কিছুর প্রতি কোনো খেয়াল নেই, গম্ভীরভাবে রােগীর দিকে এগোলেন। তারপর সেই কাগজের চোঙার একদিকের খােলামুখ তার বুকে বসালেন আর অন্যদিকে নিজের কান চেপে ধরলেন। হৃদস্পন্দন শােনার পর ফুসফুস দিয়ে শ্বাস- প্রশ্বাসের শব্দও তিনি শুনলেন।
আনন্দে তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেল। শব্দগুলাে এত জোরে শােনা যাচ্ছিল যে মনে হলো যেন কানে কানে ওরা কত কথাই বলছে।
এরপর নতুন বানানাে চোঙটি নিয়ে দৌড়ে তিনি রােগীদের ওয়ার্ডে গেলেন। একজনের পর একজনকে পরীক্ষা করে চললেন এই নতুন উপায়ে। উত্তেজনায় তার শরীর থরথর করে কাঁপছিলাে। নার্স-ডাক্তার হাসপাতালের সব লােক তার এই আজব কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে গেলেন। সবাই বলাবলি করতে লাগল ডা. লেনেক কি হঠাৎ পাগল হয়ে গেলেন নাকি? তাঁর কিন্তু সেদিকে মােটেই খেয়াল নেই। নতুন আবিষ্কারের নেশায় তখন তিনি মেতে উঠেছেন।
আরও পড়ুন: হুয়াওয়ে মোবাইল: শুরুর শেষ নাকি শেষের শুরু?
স্টেথোস্কোপ বানানোর পরিকল্পনায় যখন সফলতার ইঙ্গিত


প্রথমে গেলেন একজন নিউমােনিয়ার রােগীর কাছে। কাগজের চোঙা দিয়ে লেনেক রােগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ভারী ও মোটা শব্দ শুনলেন। তারপর একটা এমপায়েমা (EMPYEMA) রােগীর কাছে গেলেন।
রােগী তাকে জিজ্ঞেস করল, ”আপনি কি দেখছেন ডাক্তার?”
চোঙা দিয়ে অদ্ভুত কাঁপা কাঁপা কণ্ঠ শােনা গেল। রােগী যেন নাকি সুরে কথা বলছে অনেকটা ছাগলের ভ্যা ভ্যা শব্দের মতাে।
পরেরটা যক্ষ্মারােগিণী। এবার আরেকটা মজার শব্দ শুনতে পেলেন তিনি। মেয়েটা ফিসফিসিয়ে উঠল, “এ যন্ত্রটা তাে আগে দেখিনি ডাক্তার!”
লেনেকের মনে হল যেন শব্দটা গলা দিয়ে না এসে সােজা রােগীর বুক থেকে উঠে এসেছে। শব্দটা খুব স্পষ্ট তাে বটেই, এছাড়া আরও মনে হলাে যেন মেয়েটি ঠিক তাঁর কানে মুখ লাগিয়ে মিষ্টি সুরে কথা বলছে।
এরকম শব্দ শুনতে পাওয়ার কারণ কী?


আমাদের শ্বাসযন্ত্র একটা নলের মতাে। এর প্রথম অংশে থাকে স্বরযন্ত্র বা শব্দের বাক্স (Larynx)। তারপর শ্বাসনালীর শুরু। এটা আবার একটু নিচে গিয়ে দু’ভাগে ভাগ হয়েছে। এই দুই নালীর নাম ব্রঙ্কাই (Bronchi)। ব্রঙ্কাই ফুসফুসে গিয়ে শেষ হয়েছে। ফুসফুস দেখতে স্পঞ্জের মতাে ফাঁপা। সেটাকে ঢেকে রেখেছে একটা পাতলা আবরণ যার নাম প্লিউরা (Pleura)। আমাদের বুকের পাঁজর আর মাংসপেশী একটা দেয়ালের মতাে ফুসফুসকে ঘিরে রাখে আর তাই শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ বুকের দেয়ালে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে সহজেই শােনা যায়। আমরা যখন কথা বলি তখন স্বরযন্ত্রে যে শব্দ তৈরি হয় তা আবার ফুসফুস বেয়ে বুকের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়। এমনি বুকে কান লাগিয়েই সেই ভোঁ ভোঁ শব্দ শােনা যায়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় (Vocal Resonance) বা স্বরের প্রতিধ্বনি! ফুসফুসের নানান রােগে এই স্বরের প্রতিধ্বনিও হয় নানা রকমের হয়। ফুসফুসের বিভিন্ন রকমের রােগে বিভিন্ন ধরনের শব্দ স্টেথোস্কোপ দিয়ে শােনা যায়।
স্টেথোস্কোপ শব্দের উৎপত্তি


ডা. লেনেক এই কাগজের চোঙা দিয়ে পরপর অনেকগুলাে রােগী পরীক্ষা করে তাঁর চমৎকার আবিষ্কারের সাফল্য সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হলেন। কিন্তু এই কাগজের চোঙটি সবসময় ব্যবহারের জন্য খুব উপযােগী মনে হল না। তাই এর বদলে একটা ফাপা কাঠের নল তৈরি করে নিলেন তিনি। সেই কাঠের নলটি এরপর তাঁর চিরসঙ্গী হয়ে গেল। কিন্তু নাম? যন্ত্রটার একটা নামও তাে দরকার। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর তিনি তাঁর প্রিয় যন্ত্রটার নামকরণ করলেন স্টেথোস্কোপ। স্টেথোস্কোপ একটা গ্রিক শব্দ। স্টেথাে মানে হচ্ছে বুক আর স্কোপিন অর্থ পরীক্ষা করা। তাহলে এর পুরাে মানে দাঁড়াল- বুক পরীক্ষা করার যন্ত্র। একদম প্রাঞ্জল বাংলায় একে বলা যায়- হৃদবীক্ষণ যন্ত্র।
আবার আসল কাহিনীতে ফেরা যাক।


আজকাল ডাক্তারদের গলায় যে স্টেথোস্কোপটা ঝুলতে দেখা যায়, তা হচ্ছে আধুনিক স্টেথোস্কোপ। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে কাঠের নলটি বদলে ক্রোমিয়াম এবং রবারের তৈরি এই আধুনিক স্টেথোস্কোপে পরিণত হয়েছে। এই যন্ত্রে যে দুটো নল রয়েছে, তার আসল কাজ হল বুকের খুব মৃদু শব্দকে অনেকটা জোরালাে করে তােলা। নলের অল্প জায়গার মধ্যে খানিকটা শব্দ আটকা পড়ে যায় বলেই মৃদু শব্দকে জোরালাে শােনা যায়। এরপর চলল শুধু আবিষ্কার আর আবিষ্কার। কাঠের নল যন্ত্রটি দিয়ে হাজার হাজার রােগীর বুকের শব্দ শুনে তিনি বুঝলেন যে এই উপায়ে রােগ নির্ণয় করা সহজ। মাত্র তিন বছরে তিনি প্রায় শব্দগুলাের রােগ বিশেষে শ্রেণীবিভাগ করে ফেললেন, আর প্রত্যেক শব্দকে আলাদাভাবে বর্ণনাও করলেন।
কোন রোগের ক্ষেত্রে কী ধরনের শব্দ?
ফুসফুসের পাতলা প্লিউরা আবরণের দুটো ভাঁজ থাকে। সে ভাঁজের মধ্যে যখন পুঁজ মেশানাে পানি জমা হয় তখন তাকে এমপায়েমা বলে। সেই পানির চাপে ফুসফুস সংকুচিত হয়ে যায়। তাই এই নতুন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অর্থাৎ সংকুচিত ফুসফুস ও পানির মধ্য দিয়ে শব্দ সমানভাবে ও একই গতিতে যেতে পারে না, তাই বুকের দেয়ালে প্রতিধ্বনিটি এরকম কাঁপা কাঁপা শব্দের মতাে শােনা যায়। লেনেক পরে শব্দের নাম দেন এগােফোনি (aegophony)।
আবার যক্ষ্মারােগে ফুসফুস শক্ত হয়ে যায়; আর এটা সবাই জানে যে কঠিন জিনিসের মধ্য দিয়ে শব্দের পরিবহন খুব ভালাে হয়। এছাড়া এ রােগে ফুসফুসে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। তাই কোনাে ব্রঙ্কাসের যদি সে গর্তের সাথে যােগাযােগ হয়ে যায় , তাহলে স্বরের ধ্বনির পরিবহন আরও বেড়ে যায়। তখন মনে হয় শব্দ যেন ঠিক বুক থেকে সরাসরি কানে এসে পৌছাচ্ছে। খুব আস্তে কথা বললেও তা খুব পরিষ্কার ও জোরালাে শােনা যায়। এরই নাম হুইসপারিং পেকটোরিলােকুই। লেনেকই এর নাম দিয়েছিলেন হুইসপারিং (Whispering Pectoriloquy)।
লেনেকের বই প্রকাশ ও একরাশ নিন্দা ও গঞ্জনা প্রাপ্তি
পরবর্তীতে লেনেক যক্ষ্মারােগের উপর বিশেষভাবে গবেষণা করেন। তার গবেষণার প্রাপ্ত ফল থেকে বিভিন্ন শব্দের কার্যকারণ ও রােগের সাথে এর যােগাযােগ সম্বন্ধে একটি বই রচনা করেন। তিনি এই বইয়ে উল্লেখ করেন বুকের রােগ সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। এর সাথে দেহের উত্তেজনার কোনাে সম্পর্ক নেই। স্টেথোসকোপের মধ্য দিয়ে ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের কাজকর্মের শব্দ শুনে সহজেই এর স্বাতন্ত্র্য ধরা যায়।
লোকজন এবং সমসাময়িক ডাক্তাররা এই মতবাদের জন্য তাকে পাগল বলে নিন্দা-বিদ্রুপ আর কতগুলাে রসালাে মন্তব্য ছুঁড়তে লাগলো। তামাম শহর এই মজার ব্যাপার নিয়ে সরগরম হয়ে উঠল। অবস্থা শেষ পর্যন্ত এমন দাঁড়াল, প্যারিসের লােকজন তাকে প্রকাশ্যে অপদস্থ করতেও সংকোচবোধ করতো না।
মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে তিনি মানুষের কাছ থেকে পেলেন একরাশ নিন্দা ও গঞ্জনা। তিনি বুঝলেন, এই পৃথিবীতে তাকে বোঝার কেউ নেই। তিনি একা, দারুণ একা। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তার মতবাদে অটল ছিলেন এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন একদিন না একদিন তার মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হবেই।
১৮২৬ সালে হঠাৎ তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রােগে ভুগে ভুগে তিনি দারুণ রােগা হয়ে গেলেন। যে যক্ষ্মারােগের কারণ খুঁজতে গিয়ে শত শত রােগীর পাশে কাটিয়েছেন দিনের পর দিন সেই যক্ষ্মা রােগ তিনি নিজেই যে কখন বাঁধিয়ে বসেছেন, টেরই পান নি। প্রথম প্রথম অল্প জ্বর হতো, একটু পরিশ্রমেই দারুণ ক্লান্ত হয়ে পড়তেন তিনি। তারপর একদিন কফের সাথে এক ঝলক তাজা রক্ত বেরিয়ে মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল তাঁর। বুঝলেন, তাঁর দিন শেষ হয়ে এসেছে। কোনােমতে নিজেকে সামলে বিছানায় শুয়ে পড়লেন, তাঁর ফ্যাকাসে ঠোঁট দুটো থর থর করে কেঁপে উঠল এবং সব ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ওপারের পথে পারি জমালেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসের মহৎ এই আবিষ্কারক।
লেনেকের আবিষ্কার অন্ধকার থেকে আলোতে
একটা ফুল, যে শুধু গন্ধই বিলিয়ে গেল অকাতরে একটা প্রাণ, যে শুধু মানুষের কল্যাণেই কাজ করে গেল সারাজীবন, এভাবে হারিয়ে যাবে, ফুরিয়ে যাবে এ কি হতে পারে? তাই তো তাঁর মৃত্যুর ঠিক কয়েক বছর পরেই ১৮৫১ সালে আর্থার লিরেড লেনেকের উদ্ভাবিত স্টেথোস্কোপটিকে আধুনিক স্টেথোস্কোপের রূপ দেন এবং ১৮৫২ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য এটির নকশাকে উন্নত করে তৈরি করেন জর্জ ফ্লিপ ক্যামান। তখন থেকেই স্টেথোস্কোপ ডাক্তারদের বাধ্যতামূলক যন্ত্র এবং ডাক্তারদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আজকাল রােগ ধরার জন্য কত আধুনিক উপায় আবিষ্কৃত হয়েছে, নতুন নতুন যন্ত্রপাতিতে ভরে গেছে সারা জগৎ … কিন্তু এর জন্য যিনি রােগ নির্ণয় বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই অবহেলিত ডাক্তার লেনেকের কাছে আমরা সবাই চিরঋণী, চিরকৃতজ্ঞ। ইতিহাসে তাঁর নাম অম্লান হয়ে থাকবে চিরকাল।
সহায়ক গ্রন্থপুঞ্জি:
- Men Of Medicine, Hume & Ruth Fox, ISBN:9780394905495
- চিকিৎসা বিজ্ঞানে আবিষ্কারের গল্প, শুভাগত চৌধুরী, ISBN:9789848857052, প্রকাশনালয়: হেরা প্রিন্টার্স
তথ্যসূত্র:
ফিচার ইমেজ: Pixabay
খুব ভাল তথ্য । খুব ভাল লাগল । ধন্যবাদ ।