- চেনা সমাজের অন্তরালের কিছু কালরূপ নিয়ে – “ওরা কেউ না” - February 7, 2021
- শেষ হয়েও হয়নি শেষ বাংলাদেশী যে মিউজিক ব্যান্ডগুলো - January 26, 2021
ব্যান্ড মিউজিক নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে বাহারি রঙের ঝকঝকে আলো-আঁধারির মাঝে নানাবিধ মেটাল বেজের সমাহারে একদল শিল্পী গোষ্ঠী। পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যান্ড মিউজিকের সূচনা শতাব্দী পুরানো। মেটাল, হেভী মেটাল, প্রোগ্রেসিভ রক, পপ বিভিন্ন জনরার ব্যান্ড দলগুলোর গান বিশ্বজুড়ে এক বিশাল জনপ্রিয়তার নাম। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়া সত্ত্বেও এদেশীয় মিউজিক প্রিয় মানুষের কাছে ড্রিম থিয়েটার, পিঙ্ক ফ্লয়েড, নিক ক্যাব, মেটালিকা, এসিডিসি, প্যাসেঞ্জার, লিংকিন পার্ক, ইমাজিন ড্রাগন, গ্রীন ডে-এর মতো ব্যান্ডগুলো বর্তমানে গানের জগতের এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকার নাম। তবে পাশ্চাত্যের এই জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতা কিংবা ব্যান্ড মিউজিকের প্রতি ভালো লাগা তৈরি করেছে আমাদের দেশেরই মূলধারার কিছু ব্যান্ড।
বাংলাদেশের মিউজিক ব্যান্ড গঠনের ইতিহাস সেই ৬০ এর দশকে রুমি ওমার এর হাত ধরে। তবে সেটা বাংলাদেশ বলা চলে না, পূর্ব-বাংলা্র প্রথম ব্যান্ড বলা চলে। ৭০ দশকে পপ গুরু আজম খানের (উচ্চারণ) হাত ধরে শুরু হয় এ দেশের ব্যান্ড মিউজিকের পথচলা। এরপর একে একে আসে সোলস (১৯৭০), ফিডব্যাক (১৯৭৬), মাইলস (১৯৭৮), রেনেসিস, ওয়ারফেজ (১৯৮৪), প্রমিথিউস(১৯৮৬), এল আর বি (১৯৯০), ফিলিংস (১৯৯০), আর্ক (১৯৯১), পেপার রাইম (১৯৯২), ত্রিপিটক ফেইট (১৯৯৩), শিরোনামহীন (১৯৯৬), অর্থহীন (১৯৯৮), আর্টসেল (১৯৯৯) ইত্যাদি তুমুল জনপ্রিয় ব্যান্ড।
এসব জনপ্রিয় ব্যান্ড ছাড়াও ৯০ এর দশকে শুরু হয়েছিল আরো অনেক ব্যান্ডের পথচলা। তবে এদেশের মানুষের কাছে তখনো ব্যান্ড মিউজিক এতোটা জনপ্রিয় না হওয়ার কারণে এবং বছরের পর বছর ধরে কোন প্রকার কন্সার্টের ডাক না পেয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে অনেক ব্যান্ড দল। এছাড়াও নিজেদের মধ্যে ভাঙা গড়ার বদৌলতে হারিয়ে গেছে বেশ কিছু সম্ভাবনাময় ব্যান্ড। তাদের এই ভাঙা গড়ার মাঝেই কিছু ব্যান্ড, মিউজিক প্রিয়দের দিয়েছে অনেক কিংবদন্তি তুল্য গানের এলবাম।
আজ আলোচনা করবো ৯০ দশক ও তার পরের হারিয়ে যাওয়া সে সকল পাঁচটি ব্যান্ড নিয়ে যারা বর্তমানে নিয়মিত ব্যান্ডের কার্যক্রম পরিচালনা না করলেও তাদের পুরাতন এলবাম ও গানগুলো দিয়ে আজও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাংলা ব্যান্ড মিউজিকে।
প্রমিথিউস (Prometheus)
প্রমিথিউস বাংলাদেশের সত্তরের দশকের মূলধারার জনপ্রিয় একটি ব্যান্ডদল। ১৯৮৬ সালে ব্যান্ডটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যান্ডটির নাম মূলত গ্রীক সমুদ্র দেবতা প্রমিথিউস এর নাম অনুসারে রাখা হয়। দলটির লিড ভোকাল বিপ্লব (খালিদ আতাউল করিম) এর বাহারি রঙের পোষাক ছিলো ব্যান্ডটি কে হাইলাইট করার অন্যতম মাধ্যম।
:format(jpeg):mode_rgb():quality(90)/discogs-images/A-4934852-1457709543-5747.jpeg.jpg)
:format(jpeg):mode_rgb():quality(90)/discogs-images/A-4934852-1457709543-5747.jpeg.jpg)
ধরণ: পপ, দেশাত্মবোধক।
প্রাথমিক লাইনআপ:
· বিপ্লব (ভোকাল ও গিটার)
· পল্লব (কিবোর্ড),
· সোহাগ (লিড গিটার)
· সৈকত (ড্রামস)
· রুবেল (ডি জে)
তাদের এলবাম সংখ্যা ১৮ টি। স্বাধীনতা চাই, মুক্তির প্রত্যাশায়, প্রজন্মের সংগ্রাম, স্লোগান, যোদ্ধা, প্রমিথিউস ২০০০, স্মৃতির কপাট, অ-আ, পাঠশালা, ঢোল, টাকা, নাগরদোলা, রাজপথ, প্রমিথিউস আনবাউন্ড, প্রমিথিউস আনবাউন্ড ওয়ান, ছায়াপথ, আমাদের পথ।
তাদের জনপ্রিয় ট্র্যাক গুলো হলো- ‘প্রেয়সী’, ‘বিষাক্ত’, ‘বিধাতা’, ‘ভালোবাসার ক্রন্দন’।
প্রমিথিউসের ভোকাল বিপ্লব বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন। কিছুদিন আগে তিনি জানান এখন আমেরিকার এক ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিসের সাথে তিনি জড়িত আছেন। এই নিয়ে প্রথম আলোর এক সাংবাদিককে তিনি জানান-
নিউইয়র্কে তিনি এখন ট্যাক্সি সার্ভিসের কাজ করছেন। তিন বছর আগে নিউইয়র্কে গিয়ে তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন আমেরিকান এয়ারলাইনসে। এক বছর পর গাড়ি কিনে ট্যাক্সি সার্ভিস শুরু করেন।


ব্যান্ডের নানা উত্থান পতনে একটা সময় যে শিল্পীর গানে মানুষ মাতোয়ারা হত সে আজ শ্রোতাদের ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
পেপার রাইম (Paper Rhythm)
পেপার রাইম বাংলাদেশে ব্যান্ড ইতিহাসের অন্যতম শ্রোতাপ্রিয় একটি ব্যান্ড। ১৯৯২ সালে ব্যান্ডটি গঠিত হয়। তারা ১৯৯৬ সালে ‘সিলভার ডিস্ক’ আকারে একটি সিডি প্রকাশ করে। যা পাঠ-১ ও পাঠ-২ আকারে রক ত্রয়ী “মাসরুর-রাশেদ-নাসের” হিসেবে প্রকাশ পায়। এটিই তাদের প্রথম এবং শেষ এলবাম। ১৯৯৬ এর পর পরই ব্যান্ডের সদস্যরা বিভিন্ন কাজে নিজেদের নিয়ে আলাদা হয়ে যান।


ধরণ: পপ এবং সফট রক।
প্রাথমিক লাইনআপ:
· আহমেদ সাদ (ভোকাল, হারমোনিকা)
· নাসের হক (কীবোর্ড)
· রাশেদ ইকবাল (গিটার)
· শুমান জামান (বেজিস্ট)
· অনিন্দা কবির (ড্রাম)
তাদের জনপ্রিয় ট্র্যাক গুলো হলো- ‘অবসর ভালোবাসা’, ‘যখনই আকাশ’, ‘এলোমেলো’, ‘কোনো এক বিকালে’ ‘অন্ধকার ঘরে’।
আরও পড়ুন: হ্যারি পটার: এক বিশ্বখ্যাত কাল্পনিক জাদুকর চরিত্রের আখ্যান


তাদের অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান ‘অন্ধকার ঘরে’ ।বাংলাদেশী ব্যান্ড মিউজিকে এই গানটিই সবচেয়ে বেশি মিথ ছড়িয়েছে। বলা হয়ে থাকে এই গানের রচিয়তা এবং সুরকার প্রেমিকার সাথে বিচ্ছেদের পর গানটি রচনা করেন এবং শেষে আত্মহত্যা করেন। এই তথ্য জানতে পেরে তার ওই প্রাক্তনও আত্মহত্যা করে এবং সাথে তার বর্তমান প্রেমিকও। প্রায় দু দশক ধরে গানটির এমন একটি মিথ ছড়িয়ে ছিল মিউজিক প্রিয়দের মাঝে। কিন্তু অবশেষে ২০১৭ সালের পেপার রাইম তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানিয়েছে তাদের এই গানের রচিয়তা শাম্মি আত্মহত্যা করেন নি এবং এটি সম্পূর্ণ একটি মিথলজি।
দ্য ওয়াটসন ব্রাদার্স (The Watson Brothers)
দ্য ওয়াটসন ব্রাদার্স ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী রক ব্যান্ড। ড্রামার খালেদ আরাফাত কাজী এবং গিটারিস্ট ইমরান আনোয়ার আজিজ পূর্বে ‘দ্য অ্যাটেম্পটেড ব্যান্ড’ নামে একটি ব্যান্ড খুলেছিলো। পরবর্তীতে তারা “দ্যা ওয়াটসন ব্রাদার্স” নামে ব্যান্ডটি পরিচালানা করে। তারা ব্যান্ড টিকে টিএবি নামে ডাকতো। তাদের সাথে সে সময় কন্ঠশিল্পী হিসেবে যোগ দেয় “ত্রিপিটক ফেইট” এর সাকিব চৌধূরি এবং বেজিস্ট ফারহান।
২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় তাদের প্রথম এলবাম “অহম”।এই এলবামটিই তাদের নতুন এই ব্যান্ডটিকে সফল করে এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়।


ধরণ: হেভি মেটাল, সফট রক, পপ।
প্রাথমিক লাইন আপ:
· সাকিব চৌধূরী (ভোকাল/২০০৫ পর্যন্ত)
· ইমরান আজিজ (গিটার)
· ফারহান সামাদ (বেজিস্ট)
· খালেদ আরাফাত কাজী (ড্রামস)
তাদের জনপ্রিয় ট্র্যাক গুলো হলো-‘আকাশ’, ‘রঙ’, ‘ছায়া’, ‘ওহম’।
ভাইব (Vibe)
ভাইব বাংলাদেশী একটি মেটাল ব্যান্ড।তারা ছিলো সময়ের সাথে মিউজিক প্রিয়দের শক্তিশালী আহ্বায়ক। ভাইবের সদস্যরা মূলত চাইত মিউজিকের সুন্দর ও সংবেদনশীল পরিবেশ তৈরি করা। তাই তারা তাদের দলের আক্ষরিক নাম রাখেন “ভাইব”।
ভাইব ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের লাইন আপে পরিবর্তন আসে ২০০২ সালে এবং শেষবারের মতো পরিবর্তন হয় জুলাই ২০০৫ এ।
তারা মোট তিনটি এলবাম প্রকাশ করে। তাদের প্রথম মিক্সড এলবাম “আগুন্তক-১” এবং একক এলবাম “দূরে দূরে” (২০০৩)। তাদের শেষ এলবাম “চেনা জগত”।


ধরণ: হাইব্রিড মেটাল, হেভি মেটাল, থ্রেশ,স্পীড মেটাল, সফট রক।
প্রাথমিক লাইনআপ:
· শুদ্ধো ফুয়াদ সাদি (ভোকাল/গিটার)
· সাব্বির হোসেন তুর্য (ড্রাম)
· সাবের আহমেদ খান (বেজিস্ট)
· সালেহ হাসান অনি (গিটার)
· ওয়াল মোঃ আকবর (কীবোর্ড)
তাদের জনপ্রিয় ট্র্যাক গুলো হলো- ‘অধরা’, ‘বিধাতারই রঙ’, ‘চেনা জগত’, ‘স্বপ্নদেব’।
রকস্ট্রাটা (Rockstrata)
রকস্ট্রাটা ১৯৮৫ সালে গিটারিস্ট মইনুল ইসলামের দ্বারা এবং বেসিস্ট ইমরান হুসাইনের দ্বারা গঠিত হয়। তাদের এই ব্যান্ডটি মূলত ১৯৯২ পর্যন্ত স্টেজ পারফর্ম করে সক্রিয় ছিল।
তারা শুরুর দিকে একটিমাত্র এলবাম প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ব্যান্ড ভাঙার ১৯ বছর পর ২০১১ সালে তারা আবার একত্রিত হলে ২০১৪ সালে প্রকাশ করে তাদের ২য় এলবাম ‘নতুন স্বপ্নের খোঁজে’।
:format(jpeg):mode_rgb():quality(90)/discogs-images/A-2827639-1424709321-6496.jpeg.jpg)
:format(jpeg):mode_rgb():quality(90)/discogs-images/A-2827639-1424709321-6496.jpeg.jpg)
ধরণ: হেভি মেটাল, অলট্রানেটিভ রক।
প্রাথমিক লাইনআপ:
· মুশফিক আহমেদ (ভোকাল)
· আরশাদ আমিন (বেজিস্ট)
· মইনুল ইসলাম (গিটার)
· ইমরান হুসাইন (রাইম গিটার)
· মাহবুবুর রশিদ (ড্রাম)
তাদের জনপ্রিয় ট্র্যাক গুলো হলো- ‘আর্তনাদ’, ‘মুক্তি দাও’, ‘মরন বৃষ্টি’।
প্রচ্ছদ চিত্রসূত্র: WallPaper Crave
অসাধারণ লিখেছো ভাইয়া 😍
শুভকামনা তোমার জন্য ❤️
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আপনাদের দ্বারা অনুপ্রেরণা পাই।
এরকম আরও ভালো ভালো লেখা পাবো আশা করছি ☺️❤️
অসাধারণ তথ্য ❤️