- আয়না কাহিনি: মনোহারিণী আয়নার একাল সেকাল - January 9, 2021
- রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ: বাংলা সাহিত্যের এক ক্ষণজন্মা নক্ষত্র - December 23, 2020
- বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন: আবির্ভূত হয়েছিলেন যিনি হাতে নিয়ে আলোকবর্তিকা - December 9, 2020
ধোঁয়া ওঠা চমৎকার এক কাপ দুধ-চা কিংবা কফির কাপে চুমুক দিয়ে, হাসি হাসি মুখে অনেকের সকালটা শুরু হলেও লেখকের ক্ষেত্রে সে চিত্র ভিন্ন। তার সকালটা শুরু হয় তিতকুটে পানীয়তে চুমুক দিয়ে, বেয়ার গ্রিলস এর মতো, “কী বিশ্রী খেতে!” বলতে বলতে! কিন্তু কেনো? এত সুস্বাদু দুধ-চা কিংবা কফির পরিবর্তে সকাল সকাল এই তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জনের কীইবা কারণ থাকতে পারে? কারণ তো নিশ্চয়ই আছে! বলছি বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর পানীয়ের কথা। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, গ্রিন টি অর্থাৎ সবুজ চার কথাই বলছি!
আজকে আমরা জানবো কেন এই পানীয়টি বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর পানীয় এবং কেন আমরা তা পান করবো! তার আগে চলুন জেনে নেই এটি কী এবং এর জন্ম ও ইতিহাস!
গ্রিন টি কী
সবুজ চা এবং কালো চা একই উদ্ভিদ ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থেকে তৈরি। চূড়ান্তভাবে এটি চা গাছের বৈচিত্র্য এবং কীভাবে চা পাতাগুলো প্রক্রিয়াজাত করা হয় তার উপর নির্ভর করে।
প্রক্রিয়াজাতকরণেই চা এর ভাগ্য নির্ধারণ হয়, কোন চা “সবুজ” হবে এবং কোন চা “কালো” হবে! সবুজ চা তুলনামূলক কম জারিত করে তৈরি করা হয়। অপরদিকে কালো চা বা লাল চা অধিক গাঁজনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়।
ক্যামেলিয়া সিনেনেসিস:
এটি চীনের ছোট পাতাযুক্ত চা এর জাত, যা সাধারণত সবুজ এবং সাদা চা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ক্যামেলিয়া সিনেনসিস অসমিকা:
এটি একটি বৃহৎ জাত যা ভারতের আসামে প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল। এটি সাধারণত শক্তিশালী কালো চা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
সময়ের সাথে সাথে এই ক্যামেলিয়া সিনেনেসিস উদ্ভিদের বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ থেকে উদ্ভূত কয়েকশো জাতের সংকর উদ্ভিদ জন্মেছে। তবে প্রযুক্তিগতভাবে যে কোনও ক্যামেলিয়া সিনেনেসিস গাছের পাতা থেকে, কোনো না কোনো ধরণের চা তৈরি করা যায়।
গ্রিন টি প্রক্রিয়াজাতকরন
গ্রিন টির জন্য, চা পাতাগুলো ক্যামেলিয়া সিনেনেসিস উদ্ভিদ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং তাড়াতাড়ি গরম করা হয় – প্যান ফায়ারিং বা বাষ্প দ্বারা। তারপর খুব বেশি জারণ রোধ করতে শুকানো হয়, যা সবুজ পাতাগুলোকে বাদামি করে তোলে এবং তার যাদুকরী গন্ধে রূপান্তর করে।
প্রথমে ক্যামেলিয়া সিনেনসিস গাছের পাতা এবং কুঁড়ি গুলো বাছাই করে তুলতে হয়। এরপর তা ১-২ ঘণ্টার জন্য পাতলা করে বিছিয়ে রাখা হয়। খুব কম সময়ের মধ্যে এই চা প্রস্তুত করা হয়, যাতে তারা তাদের সবুজ রং হারাতে না পারে। যখন চা পাতার স্বাভাবিক আর্দ্রতা বাষ্পীভূত হয়ে যায়, তখন এগুলোকে তাপ দিয়ে জারিত করার জন্য নেয়া হয়। তারপর তাপে এগুলো কুঁচকে যায় এবং তাদের রং পাল্টে যায়।
প্রযুক্তিভেদে এবং অঞ্চলভেদে তাপীয় পদ্ধতিটি পৃথক হয়ে থাকে। চাইনিজরা প্যান ফায়ারিং পদ্ধতি অনুসরণ করে, যেখানে চা পাতা ভাজা হয় এবং চা এর রঙ হালকা হয়ে যায়।
আবার জাপানি পদ্ধতিতে চা পাতা গুলোতে গভীর বাষ্প দেওয়া হয়, যা চা পাতাগুলোকে উজ্জ্বল সবুজ রঙ দেয়। সর্বশেষ ধাপটি হলো চায়ের পাতাগুলোকে রোলিং করা অর্থাৎ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অতিরিক্ত জল ফেলে দেয়া। প্রক্রিয়াটির এই অংশটিই মূলত চায়ের বিভিন্ন রকমফের তৈরি করে থাকে।
উৎস
সমস্ত চা একই উদ্ভিদ হতে উদ্ভুত হলেও চীন, জাপান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, হাওয়াই এমনকি দক্ষিণ ক্যারোলিনা সহ আজ সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের গ্রিন টির উৎপাদন হয়।
গ্রিন টিকে অবশ্য চীনে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। বলা হয়ে থাকে যে আজও চীনে “চা” শব্দটি কেবল গ্রীন টিকেই বোঝায়, পাশ্চাত্যের মতো চায়ের সাধারণ চা কে নয়। চীনের ইউনান প্রদেশটি ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ প্রজাতির মূল বাড়ি হিসাবে বিবেচিত হয়। প্রকৃতপক্ষে এটি সত্যিই একটি অবাক করা তথ্য যে, বিশ্বের ৩৬০এর অধিক ধরনের চায়ের মধ্যে ২৬০টি ইউনানে পাওয়া যায়।
ইতিহাস
জেনে অবাক হবেন যে, পরিকল্পিত ভাবে এই গ্রিন টির জন্ম হয়নি! একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, চীনের সম্রাট এবং চীনা ওষুধের উদ্ভাবক শেননং খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩৭ অব্দের কোনো এক সময়ে ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন।
বিশ্রামের সময় কাছাকাছি কোনো চা গাছ থেকে সতেজ চা পাতা তার ফুটানো জলের কাপে পড়েছিলো। অসতর্কতাবশত তিনি সেটা খেয়েছিলেন! এবং পরবর্তীতে নিজেকে বেশ সতেজ হিসেবে আবিষ্কার করেছিলেন! এরপর অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এটি সর্বজন স্বীকৃত চায়ে পরিণত হয়। এবং ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে পরিচিতি পায়।
আবার কেউ কেউ খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ এবং পরবর্তী শতাব্দীতে বিভিন্ন বৌদ্ধকে চা আবিষ্কার করার জন্য কৃতিত্ব দিয়ে থাকে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভারত এবং চীনে ভ্রমণের সময় তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে সাথে চা পান করার রীতিটিও ছড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হয়। শারীরিক সতেজতা এবং ধ্যানে সহায়তার জন্য তারা অ্যালকোহলের পরিবর্তে চা পান করাকে আধ্যাত্মিক ও সামাজিক অনুশীলনে পরিণত করেছিলো।
জাপানে ১১৯০ খ্রিস্টাব্দে গ্রিন টির জনপ্রিয়তা পায়।একজন জেন প্রিস্ট সর্বপ্রথম চীন থেকে জাপানে গ্রিন টির প্রচলন করেন। তিনি জাপানে ফেরার সময় সাথে করে চা গাছের চারা ও বীজ এনেছিলেন।
এইজাই নামক একজন যুবক প্রিস্ট চীন থেকে শেখা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি জাপানে তার নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে চীনের মতো করে চা গাছের পরিচর্যা, চা উৎপাদন এবং সংরক্ষণের উপায় গুলো চালু করেছিলেন।
ধারণা করা হয় পুরো জাপানে তিনিই চা পান করার রীতি চালু করেছিলেন। আজ অবধি, গ্রিন টির উৎপাদন ও রপ্তানির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দুটি দেশ চীন ও জাপান।
গ্রিন টির প্রকারভেদ
গ্রিন টি প্রধানত তিনটি দেশ চীন, জাপান এবং ভারতে জন্মায় এবং প্রতিটি দেশের নিজস্ব ধরনের গ্রিন টি রয়েছে। সেরা গ্রিন টির প্রজাতিগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করা হলো:
ম্যাচা (জাপান) – এটি মূলত গ্রিন টি পাউডার। গরম পানির সাথে, টি পাউডার মিশিয়ে, একটি ছোট বাঁশের তৈরি ব্রাশের সাহায্যে ফোম বা ফেনা তৈরি করে পরিবেশন করা হয়।
ড্রাগনওয়েল (চীন) – এটি চীনের মূল ভূখণ্ডের সবচেয়ে প্রিয় সবুজ চা।
চুন মেই (চীন) – এই চা এর জন্ম ইউনান প্রদেশে। ফুটন্ত পানিতে হালকা গরম করলে এর সুন্দর পীতাভ রং পাওয়া যায়!
মাকাইবাড়ি টি এস্টেটস (ভারত) – এটি একটি পুরষ্কারপ্রাপ্ত গ্রিন টি। বেশ গন্ধযুক্ত হলেও, এটি তেমন কড়া নয়, হালকা ধরনের চা।
ক্রেগমোর এস্টেট (ভারত) – ক্রেগমোর এস্টেট চা ভারতের নীলগিরি পর্বতমালায় উৎপন্ন হয়। গ্রিন টির এই প্রকরণ অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত এবং মিষ্টি।
সেনচা (জাপান) – জাপানে যত গ্রিন টি পাওয়া যায় তার প্রায় তিন চতুর্থাংশ হলো সেনচা, এটি জাপানের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত গ্রিন টি। যেহেতু এটি অন্যান্য জাপানি গ্রিন টির তুলনায় উচ্চ মানের পাতা থেকে তৈরি করা হয়, তাই এটি “অতিথি চা” নামে পরিচিত।
গ্যোকুরো (জাপান) – গ্যোকুরো হলো জাপানের সর্বোচ্চ মানের গ্রিন টি। মূলত পরিচর্যা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ভিন্নতার কারণেই এটি উন্নত মানের গ্রিন টিতে পরিণত হয়েছে। একে এমনভাবে পরিপক্ক হওয়ার সুযোগ দেয়া হয় যা চা পাতাগুলোর সুগন্ধ এবং স্বাদ বাড়িয়ে তোলে। এর রং তীব্র সবুজ এবং অন্যান্য গ্রিন টির তুলনায় খুব মিষ্টি। এগুলোই মূলত গ্রিন টির সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ধরন।
চীনা গ্রিন টি
চীনকেই গ্রিন টির মূল বাড়ি বলা হয়। সম্রাট শেননং-এর আবিষ্কারের পর প্রথম দিকে গ্রিন টি ছিলো অনেক ব্যয়বহুল একটি পানীয়। এবং তা শুধু সমাজের উচ্চশ্রেণির লোকেদের জন্য সহজপ্রাপ্য ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে পরবর্তীতে বহু সম্রাট গ্রিন টির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। যার ফলে আমরা পেয়েছি আজকের গ্রিন টি।
চীনে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত এবং সর্বাধিক পছন্দের তালিকাটিকে প্রতিনিধিত্বকারী গ্রিন টি গুলোর মধ্যে ড্রাগনওয়েল, দোংটিং বিলুচুন, হুয়াংশন মাও ফেং, লুশান ইউনুউ, লিউয়ান গুয়াপিয়ান এবং জিনিয়াং মাওজিয়ান অন্যতম।
১৯০০ সালের শুরুর দিকে গ্রিন টি চীনের বাইরে প্রথম স্বীকৃত হয়। দ্রুত তা বিদেশে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ১৯১৫ সালে ‘জিনিয়াং মাওজিয়ান’ পানামার ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে ‘বিশ্বের সেরা চা’ হয়ে স্বর্ণপদক জিতেছিলো।
জাপানি গ্রিন টি
জাপানি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে গ্রিন টি। জাপানে এর এত চাহিদা রয়েছে যে আপনি যেখানেই যান ক্যানড এবং বোতলজাত গ্রিন টি পেতে পারেন। এমনকি আইসক্রিম ভক্তদের জন্য রয়েছে গ্রিন টি আইসক্রিম ! যাা জাপানিদের অনেক পছন্দের!
জাপানের গ্রিন টি অনেকভাবে চীনের গ্রিন টি থেকে আলাদা, তবে সত্য কথা হলো গ্রিন টি চীন থেকেই জাপানে প্রবেশ করেছে।
নারা ও হিয়ান যুগে জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন ছিল। অনেক জাপানী বৌদ্ধ ভিক্ষু বিভিন্ন প্রসিদ্ধ মন্দিরে শিক্ষাগ্রহণের উদ্দেশ্যে চীন ভ্রমণ করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে জাপানে ফিরে তাদের নিজস্ব বিদ্যা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তাদেরই একজন ছিলেন জেন প্রিস্ট এইজাই। তিনিই জাপানে প্রথম চীনা পদ্ধতিতে গ্রিন টি চাষ শুরু করেন। তিনি গ্রিন টি নিয়ে ১২১২ খ্রিস্টাব্দে “কিসায়োজোকি” নামক একটি বই লিখেছিলেন। গ্রিন টি সম্পর্কে এই অত্যন্ত বিস্তৃত বইটি একটি দুর্দান্ত সাফল্য ছিল এবং এর কারণেই এইজাই জাপানি গ্রিন টি সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে স্বীকৃত।
বর্তমানে জনপ্রিয় জাপানি গ্রিন টি গুলোর মধ্যে সেনচা, ম্যাচা, গ্যোকুরো, হোজিচা, গেনমাইচা অন্যতম।
স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
আমরা চা কেন খাই? কেউ খাই মাথা ধরলে, কেউ খাই শখ করে, কেউ খাই ভালো লাগে বলে। চা খাওয়া কারোর নেশা, একবেলা না খেলেই নয়! আবার কেউবা এমনিতেই খাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই, সবাই খাচ্ছে তাই সেও খাচ্ছে! কেউ আবার চা খেতে পছন্দই করে না!
চা খাওয়া বা না খাওয়ার অনেকগুলো কারণ পাওয়া গেলো! কিন্তু স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে দুধ, চিনি বিহীন এমন অদ্ভুত চা কতজন খাই বলুন? এখন থেকে নাহয় অভ্যেসটা পাল্টে নিই!
চলুন দেখে আসি এই অদ্ভুত স্বাদের পানীয়টির বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর পানীয়তে পরিণত হওয়ার কারণসমূহ:
১. গ্রিন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
যেহেতু এটি স্বল্পতম প্রক্রিয়াজাতকরন করা হয় সেহেতু গ্রিন টিতে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ যেমন পলিফেনলস, ক্যাটচিনস এবং অন্যান্য ধরণের ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে। যা ফ্রি র্যাডিক্যালগুলোর সাথে লড়াই করে কোষ এবং অণুগুলোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
২. হৃদরোগের সুরক্ষা
দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিত গ্রিন টি পান করা বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে বলে জানা যায়। এছাড়াও তাদের উচ্চ রক্তচাপ বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৩. মস্তিষ্কের উন্নয়ন
গ্রিন টিতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড গুলোর নিউরনে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব থাকতে পারে, যা আলঝেইমার রোগ এবং পার্কিনসন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
৪. হাড়ের গঠনের উন্নতি করে
হংকং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, গ্রিন টি হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গ্রিন টির তিনটি প্রধান উপাদান – এপিগ্যালোকেটচিন (ইজিসি), গ্যালোকেটচিন (জিসি), এবং গ্যালোকেটচিন গ্যালেট (জিসিজি) – হাড়ের গঠনকে উৎসাহিত করতে এবং এর ভাঙ্গন রোধে সহায়তা করতে পারে।
৫. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
গ্রিন টিতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। সুতরাং, যারা ঝুঁকিতে আছেন বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের জন্য গ্রিন টি পান করা বেশ উপকারী।
৬. মানসিক প্রশান্তি
মস্তিষ্ককে শান্ত এবং স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে গ্রিন টির রয়েছে দারুণ ভূমিকা। অত্যন্ত মানসিক চাপে এক চুমুক গ্রিন টিই আপনার মধ্যে একটি প্রশান্তির ধারা বইয়ে দিতে পারে।
৭. ওজন হ্রাস
গ্রিন টি কি ওজন কমাতে সহায়তা করে?
এটিই সম্ভবত গ্রিন টির উপকার সম্পর্কে সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে এবং বিপাকীয় হারকে বাড়িয়ে তোলে। তবে সমস্ত গবেষণা একই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় না। এমনকি গ্রিন টি চর্বি পোড়াতে সহায়তা না করলেও, ভারী খাবারের পরে গ্রিন টি পান করা হজমে সহায়তা করে।
গ্রিন টি পান করার উপযুক্ত সময়
স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনেই যে আমরা তিনবেলা গ্রিন টি পান করা শুরু করবো তা কিন্তু না! এটি পানের উপযুক্ত সময় সকালের দ্বিতীয় পানীয় হিসেবে অর্থাৎ প্রথমে এক গ্লাস সাধারণ খাবার পানি এবং তারপর গ্রিন টি। অথবা সকালের খাবারের ২-৩ ঘন্টা পরে খাওয়া যেতে পারে। কারোর যদি ঘুমের সমস্যা না থাকে, তবে দিনে ২ বেলা এটি খাওয়া যেতে পারে, সকালে এবং বিকেলে। সকালে এক কাপ গ্রিন টিই আপনার সারা দিনের শারীরিক সতেজতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
ক্যাফেইনের পরিমাণ
আসলেই কি এটি একেবারেই ক্যাফেইন মুক্ত? নাকি কিছুটা ক্যাফেইন আছে?
এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তরটি হলো, হ্যাঁ গ্রিন টিতে ও ক্যাফেইন আছে। কিন্তু তা পরিমাণে খুব সামান্য। এক কাপ খাঁটি গ্রিন টি অর্থাৎ ৮ আউন্স গ্রিন টিতে প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। যা ক্যাফেইনের স্বল্প পরিমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
জেনে খুশি হবেন যে, এটি আপনার এক কাপ সাধারণ কফিতে থাকা ক্যাফেইনের মাত্র ১/৪ অংশ। এবং এক কাপ সাধারণ কালো চাতে থাকা ক্যাফেইনের ১/২ অংশ।
তাই আপনি, নিশ্চিন্তে গ্রিন টিকে আপনার প্রতিদিনের অবশ্য পানীয়তে পরিণত করতে পারেন!
এত উপকারিতা জানার পরেও যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন “গ্রিন টি কেন খাবো?” তাহলে শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামান স্যারের মতো করে বলতে হয় “কে বলেছে আপনাকে গ্রিন টি খেতে?”
আরও পড়ুন: বিস্কুট কথা : চেনা বিস্কুটের অচেনা গল্প
ফিচার চিত্রসূত্র: Pixabay
তথ্যসূত্র:
সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহ: