- বিচিত্র মানুষের বিচিত্র স্বভাব নিয়ে ব্যোমকেশের চিড়িয়াখানা - February 16, 2021
- রুলার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড: মুঘল সাম্রাজ্যের স্বর্ণালী যুগের কারিগর সম্রাট আকবর - February 13, 2021
- ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট: দেশভাগের এক পূর্ণাঙ্গ আখ্যান - February 4, 2021
কল্পনা করুন যে, বসে আছেন বাংলাদেশের কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রামে। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য আপনার খুবই দুরূহ একটি সমাকলন তথা ইন্টিগ্রেশন সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। ইন্টারনেটে অসংখ্য সমাকলন সমস্যার সমাধান থাকলেও আপনার সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় নেই সেখানে। অথবা ধরুন, প্রজেক্টের কাজে একটি বিশেষায়িত বর্তনী সমাধান করতে হবে। কিন্তু ইন্টারনেটে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কিছুই পেলেন না। এমন অবস্থায় তো দুশ্চিন্তা এবং রাগে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করে। থাক, মাথার চুল ছিঁড়ে লাভ নেই। তার চেয়ে চলুন, কোরা নামের প্ল্যাটফর্মকে ধন্যবাদ জানান মুশকিল আসান করার জন্য।
সভ্যতা হিসেবে মানুষ আজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞান, কলা বা আইন; কোনো শাস্ত্রেই এখন আর একজন মানুষের পক্ষে বিস্তৃত জ্ঞান রাখা সম্ভব না। তাই কোনো বিশেষায়িত ক্ষেত্র সম্পর্কিত সমস্যায় পড়লে নিজেকে বেশ অসহায় মনে হয়। মনে হয়, ইশ, যদি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো কোনো সন্ধান পাওয়া যেত। আর এই সমস্যার সমাধানের জন্যই কোরা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে বসেই আপনি বিমান প্রকৌশল বিদ্যায় অভিজ্ঞ কারো কাছে একটি বিশেষায়িত প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবেন। অথবা আইনশাস্ত্রের কোনো একটি নির্দিষ্ট শাখায় আপনার জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।
কোরার জন্মকথা
সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির একটি প্রতিষ্ঠান হলো জগদ্বিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাওয়া আসলেই স্বপ্নের মত। তাই যখন ফেসবুক কানেক্ট এর মূল স্বপ্নদ্রষ্টা চার্লি শিভার এবং ফেসবুকের চিফ টেকনোলজি অফিসার অ্যাডাম ডি’অ্যাঙ্গেলো যখন ২০০৮ সালের শেষদিকে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন, তখন সিলিকন ভ্যালিতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল।
ফেসবুকের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরে তাঁরা দুইজনই বেশ কিছুদিনের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে যান। কিন্তু তাঁরা আবার নিজেদের ক্যারিশমা দেখানোর জন্য কিছুদিনের মধ্যেই ফিরে আসেন।
পরবর্তী বছর, অর্থাৎ ২০০৯ সালের জুন মাসে কোরা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সবশেষে তারপরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালের জুন মাসের ২১ তারিখ এই ওয়েবসাইটটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তখন থেকেই জনসাধারণের মাঝে মুক্ত জ্ঞান বিতরণ এবং বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে এটি কাজ করে যাচ্ছে।
কোরা নামকরণের সার্থকতা
ঠিক কী কারণে ‘কোরা’ নাম রাখা হলো, তার চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন কোরার সহপ্রতিষ্ঠাতা চার্লি শেভার নিজেই –
আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করেছিলাম। আমরা এমন একটি নাম খুঁজছিলাম, যেটি দুই শব্দাংশ বিশিষ্ট হবে। মানুষ একে শুনেই সহজে উচ্চারণ করতে পারবেন। অপ্রচলিত একটি নাম, যা পূর্বে ব্যবহৃত হয়নি, ফলে মানুষ একে সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজলে সহজেই খুঁজে পাবে এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদর্শিত হবে না। একটু অপ্রচলিত কোনো বর্ণ দিয়ে নামটি শুরু হবে। পাশাপাশি এমন কোনো নাম যা আমাদের কাজের সাথে প্রাসঙ্গিক।
এই সকল নিয়মকানুন ঠিক করার পরে তাঁরা দুইজন বসে যান খাতা কলম নিয়ে। প্রায় ১,০০০ এর মত নাম লিখে ফেলেন তাঁরা। তারপরে শুরু হয় বাদ দেওয়ার পালা। হাজারের কাছাকাছি থেকে বাদ দিতে দিতে সংখ্যাটি নেমে আসে পাঁচে। তারপরে তাঁরা যোগাযোগ করেন তাদের কিছু বন্ধুবান্ধবের সাথে। তাদের সবার মিলিত আলোচনায় অবশেষে কোরা (Quora) ঠিক হয়। চার্লি শেভার আরো বলেছেন, নামের এই প্রতিযোগিতায় ‘Quora’ এর সর্বাধিক নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ‘Quiver’।
বিভিন্ন কোরা ব্যবহারকারী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই নামের বিভিন্ন রহস্য ব্যাখ্যা করেছেন। এরকম একটি প্রচলিত তত্ত্ব হল,
Qu এর দ্বারা বোঝানো হচ্ছে Question বা প্রশ্ন
or এর দ্বারা বোঝানো হচ্ছে or বা অথবা
a এর দ্বারা বোঝানো হচ্ছে Answer বা উত্তর
অর্থাৎ, এই পুরো মাধ্যমের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করা।
আরো পড়ুন: জন্মদিনের জন্মদিন : ইতিহাস, একটি প্যারাডক্স ও লিপ ইয়ারের যন্ত্রণা
কোরা যেভাবে গুগল থেকে আলাদা
প্রশ্ন আসতেই পারে যে, যদি জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণই মূল উদ্দেশ্য হয়, তবে গুগল ছেড়ে আমি কেন কোরার শরণাপন্ন হবো?
আসলে গুগলের থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সাধারণত বিস্তীর্ণ পরিসরে হয় কিন্তু সেখানে কোনো একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্রে বিস্তারিত জানা অনেকটা কঠিন।
একদম প্রথমে একটি ইন্টিগ্রেশনের সমস্যার কথা উল্লেখ করেছিলাম। সেই সমস্যাটি আবার বিবেচনা করি এখানে। ধরুন, আপনি গুগলে কোনো একটি ইন্টিগ্রেশন সমস্যা লিখে সার্চ করলেন। গুগল যা করবে তা হলো, সমস্ত স্ট্যান্ডার্ড ইন্টিগ্রালের একটি তালিকা আপনাকে ধরিয়ে দিবে। বেশি হলে কিছু ইউটিউব চ্যানেলের খোঁজ দিবে যেখানে একই ধরনের কিছু সমস্যা সমাধান করে দেওয়া। অর্থাৎ, সরাসরি আপনার সমস্যার সমাধান না হলেও আপনি সাহায্য পাচ্ছেন। এইদিক দিয়ে কোরা সম্পূর্ণ আলাদা। তারা আপনাকে আপনার নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে।
দ্বিতীয়ত, বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বড় একটি বিষয়। গুগলে আপনাকে যেসব ওয়েবসাইটের তালিকা দেখানো হচ্ছে, তাদের কোনোটির সম্পর্কেই আপনি তেমন কিছু জানেন না। কিন্তু কোরা প্ল্যাটফর্মে যেহেতু আপনার প্রশ্নের উত্তর কিছু মানুষ দিচ্ছেন, আপনি চাইলে সেই ব্যক্তির প্রোফাইল দেখে আসতে পারেন এবং নিশ্চিত হতে পারেন যে, উত্তরদাতা আপনার প্রশ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট কী না! এটি কোরার অনেক বড় একটি সুবিধা।
তৃতীয়ত, গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিনগুলোর অ্যালগরিদম। গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো কোনো প্রশ্নের সেইসব উত্তরই প্রদর্শন করবে যেগুলো এক বাক্যে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিবে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিনগুলো সঠিক এবং সংক্ষিপ্ত উত্তরকে প্রাধান্য দেয়। কিন্তু সকল জায়গায় সংক্ষিপ্ত উত্তর আসলে গ্রহণযোগ্য নয়। এই সমস্যার সমাধান করে দেয় কোরা। কোরার অ্যালগরিদম এমনভাবেই ঠিক করে রাখা যে, এটি তুলনামূলক বিস্তারিত উত্তরগুলোকে তালিকায় এগিয়ে রাখার চেষ্টা করে। তাছাড়া, প্রশ্নের উত্তর যাচাইকরণে তারা ব্যবহারকারীর মতামতকেও গুরুত্ব দেয়। অর্থাৎ, কোনো উত্তরকে যদি কোনো ব্যবহারকারী ভুল হিসেবে চিহ্নিত করে, তবে সেই উত্তরগুলোকে লুকিয়ে ফেলা হয় অন্যসকল ব্যবহারকারী থেকে।
কোরার কার্যক্রম প্রক্রিয়া
সত্যিকার অর্থে, কোরা এক বিশেষায়িত সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন দেশ, ধর্ম, ভাষা, জাতিসত্তার মানুষজন এখানে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। মানুষের কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্র সম্পর্কিত প্রশ্নেরও জবাব দেন তারা। স্বভাবতই, মতামতের অমিল থাকা অবশ্যম্ভাবী এক্ষেত্রে। ফলশ্রুতিতে এক সম্প্রদায় বা মতাদর্শের মানুষের সাথে ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের যেকোনোরূপ ইন্টারনেট সংঘাতের সম্ভাবনা একদম ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোরা তাই মডারেশন টিম গঠন করেছে। এই দলের মূল উদ্দেশ্য হল এইসব ধরনের প্রশ্নকে বা উত্তরকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে হয় বাতিল করে দেয় অথবা অন্যান্য ব্যবহারকারীদের থেকে লুকিয়ে ফেলে।
এছাড়া বিশেষায়িত ক্ষেত্রের প্রশ্নগুলোকে কোরার অ্যালগরিদম আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করে। এসকল প্রশ্ন সবসময় অন্যান্য পাঠকদের নজর আকর্ষণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে। কিন্তু এসকল প্রশ্ন যেহেতু কারো না কারো জন্য অধিক প্রয়োজনীয় এবং যথাযথ সমর্থন না পেলে লেখক আর নাও লিখতে পারেন; এই কারণে এধরনের লেখাকে উৎসাহ দানের জন্য কোরা কর্তৃপক্ষ সেগুলোকে ব্যাজ প্রদান করে এবং সেরা উত্তর হিসেবে চিহ্নিত করে।
আবার, অধিক জনসংযোগ ঘটায় এবং অনেক বেশি মানুষ পছন্দ করে, এমন উত্তরগুলোকেও ব্যাজ প্রদান করা হয় লেখককে এরূপ মানসম্পন্ন লেখায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
আপনি আপনার ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করে কোরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এছাড়াও আপনার ফেসবুক বা জিমেইল ঠিকানা দিয়ে সরাসরি কোরা ব্যবহার করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পূরণ করে অ্যাকাউন্ট খোলার পরে আপনাকে আপনার প্রোফাইলে সমস্ত তথ্য পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি আপনি কোন কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ বা উত্তর প্রদান করতে ইচ্ছুক, তাও আপনাকে পূরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হবে। এই সমস্ত কাজ শেষ হলে আপনি চলে আসবেন আপনার ‘ফিড’ এ। এই ‘ফিড’ অনেকাংশে ফেসবুকের ‘নিউজ ফিড’ এর মত।
আপনার পছন্দকৃত বিষয় সম্পর্কিত সকল নিবন্ধ এবং আপনি যাদেরকে অনুসরণ করছেন, তাদের সকলের লেখাই এখানে প্রদর্শিত হবে। এটি অনেকাংশে ফেসবুকের ‘নিউজ ফিড’ এর সাথে তুলনীয়।
চলবে … … …
পরবর্তী পর্বের জন্য চোখ রাখুন অসামান্যতে মোঃ রেদোয়ান হোসেনের লেখায়
ফিচার চিত্রসূত্র – Marketing Land
পরের অংশের অপেক্ষায় আছি…
ধন্যবাদ, দ্রুত লেখার চেষ্টা করবো অবশ্যই।
That’s Great I like to much
ধন্যবাদ ভাইয়া!