- মঙ্গল অভিযাত্রা : মঙ্গলে মানববসতি গড়ার এক অকল্পনীয় মিশন - December 19, 2020
- আলফ্রেড দ্য গ্রেট: ভাইকিং আক্রমণের বিরুদ্ধে একজন সফল রক্ষক (পর্ব ২) - December 15, 2020
- আলফ্রেড দ্য গ্রেট: ভাইকিং আক্রমণের বিরুদ্ধে একজন সফল রক্ষক, পর্ব ১ - December 11, 2020
আলফ্রেড দ্য গ্রেট এর জন্ম এবং শৈশব সম্পর্কে আমরা জেনেছি গত পর্বে। সেই সাথে ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে Pope Leo IV এর ভবিষ্যৎ বাণী। আরো জানতে পারি রাজা হিসেবে তার ইতিহাস,কেনো তিনি Ealhswith কে বিয়ে করেন এবং শক্তিশালী ভাইকিংদের বিরুদ্ধে তাঁর সশস্ত্র লড়াই এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ইংল্যান্ডের উদ্বর্তিত থাকা
৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আলফ্রেড মূলত নতুন এক সামরিক সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। এবং পরবর্তীতে তা পরীক্ষার পালা। পরীক্ষার পর্ব এসেছিল ৮৯২ এর দিকে। ২৫০টি জাহাজের একটি বহর নিয়ে রথ্যার নদীর(Rother) উপর দিয়ে তিনি যাত্রা করেছিলেন এবং ক্যান্টের(Kent) আ্যপলাসেরে একটি সুরক্ষিত শিবির তৈরি করেন। এটি ছিলো মূলত বিজয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার লক্ষ্য।
একই সময় ৮০টি জাহাজের দ্বিতীয় একটি বহর কেন্টকে ঘিরে রেখেছিল। কেন্টের উত্তর এবং দক্ষিণ উপকূলে ভাইকিংস সেনারা শিবির স্থাপন করেছিল। আলফ্রেডের উপস্থিতি জানতে পেরে মিল্টন রেজিসে ভাইকিংসরা আলোচনার সম্মুখীন হয় এবং এসেক্সের বেনফ্লিটে একটি নতুন ঘাঁটি তৈরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তবে আরো একটি ভাইকিং ফোর্স একত্রিত হয়েছিলো ৮৯৩ এর আশেপাশে। তারা চ্যানেল ধরে পশ্চিমে যাত্রা করেছিল। সেই বাহিনীকে তিলি ফার্নহ্যামের যুদ্ধে(Battle of Farnham) পরাজিত করেছিলেন। চ্যানেল বরাবর আক্রমণকারীদের মোকাবেলার জন্য আলফ্র্যাড নিজেই যাত্রা করেছিলেন। পরবর্তীতে আবার বেনিফ্লিটে এই আক্রমণ চালানো হয়। সেখানে ভাইকিংদের কিছু নৌকা পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং অনেককে বন্দি করা হয়।


তবে তারা পরাজিত হয় নি। ৮৯৪ এর শেষে বেনিফ্লিট ভাইকিং তাদের অভিজান থেকে কিছু স্বর্ণ এবং গৌরব অর্জনের জন্য চূড়ান্ত চেষ্টা চালায় থ্যামেস(Thames) এবং পরবর্তীতে হার্টফোর্ড(Hertford) নদীর তীরে যাত্রা করে। কিন্তু তা স্থায়ী হতে পারে নি। ভাইকিংরা তাদের নৌকাগুলো ত্যাগ করে পশ্চিমের দিকে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
আলফ্রেড এর কিছু অসমান্য গুণ যা তাঁকে ‘Great’ উপাধিতে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়
ভাইকিংদের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডকে সাফল্যের সাথে রক্ষা করা ছাড়াও আলফ্রেড ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক। অনেক অ্যাংলো-স্যাক্সনস রাজা রয়েছেন যারা দুর্দান্ত সামরিক কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু আলফ্রেডকে যে বিষয়টি তাঁকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছিল তা হলো তিনিও শেখার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন এবং লিখিত ভাষা হিসাবে ইংরেজির প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উদাহরণস্বরূপ: তিনি শুধু ইংল্যান্ড নয়, কন্টিনেন্টাল ইউরোপ (Continental Europe) থেকে পণ্ডিত/বিজ্ঞ লোকদের আদালতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
আলফ্রেড ক্যারোলিংগিয়ান(Carolingian) পণ্ডিতদের [বর্তমানে ফ্রান্স এবং পশ্চিম জার্মানি থেকে] এবং ব্রিটেনের মধ্যে থেকে অন্যান্যদের ওয়েসেক্সে শিক্ষামূলক এবং ধর্মীয় মান উন্নয়নে তাঁর পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন।


এমনকি তাঁর কাছে ইংরেজি অনুবাদ করা কিছু গুরুত্বপূর্ণ ল্যাটিন বই ছিলো যাতে তাঁর লোকদের এবং দেশবাসীর পড়তে সুবিধা হয় এবং উপকৃত হতে পারে। ইতিহাস বলছে তিনি সর্বমোট চারটি বই ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন।
ইংরেজি অনুবাদকৃত ল্যাটিন বইগুলোর হলো –
1.Saint Gregory I’s “Pastoral Care”
2.Saint Augustine of Hippo’s “Soliloquies”
3.Boethius’s “Consolation of Philosophy”
4.The first 50 part of “Psalms”
এতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার বিষয়ে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। ৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এ্যাসের(Asser) দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন-
He was superior to all his brothers both in wisdom and in all good habits, and because he was warlike beyond measure and victorious in almost all battles.
তিনি তাঁর রাজত্বের শেষের দিকে ‘অ্যাংলো-স্যাক্সনস-এর কিং'(King of the Anglo-Saxons) উপাধিটি ব্যবহার করেছিলেন, কারণ তিনি নিজেই ওয়েজেক্সের বাইরেও প্রভাবশালী হয়ে উঠছিলেন।
আরও পড়ুন: আলফ্রেড দ্য গ্রেট: ভাইকিং আক্রমণের বিরুদ্ধে একজন সফল রক্ষক, পর্ব ১
কিছু ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টস ‘Alfred the great’ সম্বন্ধে
১.অত্যন্ত সাহসী ও দুর্দান্ত নেতা হওয়া সত্ত্বেও আলফ্রেড শারীরিকভাবে একজন অসুস্থ ও দুর্বল মানুষ ছিলেন। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় অসুস্থতার সাথে লড়াই করেছিলেন।
২.তিনিই একমাত্র ইংরেজ শাসক যাকে “দ্য গ্রেট” বলা হয়
৩.আলফ্রেড তার সেনাবাহিনীকে দুটি দলে ভাগ করেছিলেন। একটি গ্রুপ তাদের পরিবারের সাথে বাড়িতে থাকবে এবং অন্য গ্রুপটি ভাইকিং আক্রমণ থেকে সীমান্ত রক্ষা করেছিল।
৪.আলফ্রেডকে তার মুদ্রায় “কিং অফ দ্য ইংলিশ” বলা হত।


5.আলফ্রেড 886 সালে লন্ডন দখল করে এবং শহরের বেশিরভাগ অংশ পুনর্নির্মাণ করে।
6.জনশ্রুতিতে বলা হয়েছে যে আলফ্রেড একবার নিজেকে কবি হিসাবে ছদ্মবেশ দিয়েছিল এবং তাদের গুপ্তচর হওয়ার জন্য ভাইকিং যুদ্ধ শিবিরে গিয়েছিল।


৭. তিনি তাঁর রাজত্বের শেষের দিকে ‘অ্যাংলো-স্যাক্সনস-এর কিং’ উপাধিটি ব্যবহার করেছিলেন, কারণ তিনি নিজেই ওয়েসেক্সের বাইরেও প্রভাবশালী হয়ে উঠছিলেন।
অসমান্য বাসিন্দা! আসুন একটি হাওয়া বদল করি। অবশ্যই উপরের লিখা পড়ে বুঝাই যাচ্ছে কিছুটা আলফ্রেড কেনো ‘গ্রেট’ নামে পরিচিত। যদিও পুরো ইতিহাস হাতে কলমে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আসুন এবার একটু বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের দিকে হানা দেই। প্রশ্নটি হলো-আলফ্রেড কি আসলেই বিখ্যাত? একটু কেমন জানি হয়ে গেলো না? ইংরেজি অনুবাদ করলে হয়তো প্রশ্নটি ভালোভাবে বুঝা যায়। Was Alfred the Great really that Great? খটকা হয়তো লেগেছে। এতক্ষণ যে ‘গ্রেট’ এর জন্য আদা জল খেয়ে নেমেছিলাম ইতিহাস জানার জন্য এখন শেষে এসে বলা হচ্ছে এই কথা?
২০১৭ সালের রাজা আলফ্রেড এর ‘মহত্ব’ (greatness) নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এবং স্ট্রুয়ার্ট ব্রুকস(Struat Brooks) যেমন লিখেন,
It looks like Alfred was a good propagandist rather than a visionary military leader.
আলফ্রেডের অন্যান্য কৃতিত্বগুলোর সাথে কিছু কৃতিত্ব ছিলো। যেমন: রাজার দ্বারা নির্মিত উদ্ভাবনী ধারণাগুলোর চেয়ে দৃশ্যত ধারাবাহিকতা। উদাহরণের মাধ্যমে হয়তো বিষয়টি পরিষ্কার করা সম্ভব। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে প্রমাণিত হয় আলফ্রেড যে বার্গাল হিডেস(Burghal Hidage)-এ দূর্গগুলো সেগুলো ছিলো পূর্ববর্তী রোমান শহরগুলোর বা আয়রন এজ পাহাড়(Iron Age Hill) এর দুর্গ। যা কেবল আ্যংলো-স্যাক্সনের সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্য পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছিল।


নগর পরিকল্পনার “আলফ্রেডিয়ান” শৈলীটিও খুব বেশি কৃত্রিম বলে মনে হয়। তবে এটি যুক্তিযুক্ত হয়েছে যে উত্তরোত্তর নগর পরিকল্পনার একটি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে “আলফ্রেডিয়ান” শৈলীটিও। কিন্তু প্রমাণগুলি এটিকে পুরোপুরি বহন করে না। উদাহরণস্বরূপ, উইনচেস্টার রেডিওকার্বন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ডেটিং রিপোর্টে দেখা যায় যে, নতুন নগর পরিকল্পনা সম্ভবত ৮৪০-৮০ এর আশেপাশে নির্মিত হয়েছিল। সুতরাং, আলফ্রেডের 878 এর বিজয়ের আগে অথবা সম্ভবত তিনি রাজা হওয়ারও আগে। বিপরীতে ওরচেস্টার(Worcester) খননকার্যগুলি দেখায় যে সেখানে স্বতন্ত্র “আলফ্রেডিয়ান” রাস্তার পরিকল্পনা কেবলমাত্র দশম দশকের শেষভাগে বা একাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে আলফ্রেডের মৃত্যুর প্রায় ১০০ বছর পরে ব্যবহৃত হয়েছিল। অর্থাৎ তাঁর মৃত্যুর একশত বছর পর্যন্ত রাস্তার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় নি।
আলফ্রেড এর মৃত্যু
অবশেষে দীর্ঘ ২৮ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটে। ২৬শে অক্টোবর ৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ৫০ বছর বয়সে আলফ্রেড কোনো এক অজানা রোগে মারা যান। তাঁর পুত্র এডওয়ার্ড দ্যা এল্ডার(Edward the Elder) এবং কন্যা আ্যথেলফ্রেড(Lady of the mercians) তাঁর নীতি ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত রেখে ধীরে ধীরে ডেনল(Danelaw)-কে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে আনে। এবং পরবর্তীতে আলফ্রেডের নাতি আ্যথেলস্টেন(Aethelstan) কাজটি সম্পন্ন করে। পূরণ হয় আলফ্রেডের স্বপ্ন United Kingdom এর। আ্যথেলস্টেনকে বলা হয় ইংল্যান্ডের প্রথম রাজা।


প্রচ্ছদ চিত্রসূত্র: Ancient Origins
সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহ: